শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জমাজমি সংক্রান্ত দ্বন্দের জের ধরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন ডুবুলদিয়া কাজী কান্দি গ্রামের আব্দুল লতিফ বেপারীর ছেলে স্থানীয় কাজীর হাট বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খিদির রহমান বেপারীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছে জাজিরা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন কাজী ও তার দলবল। এঘটনার জেরে খিদির সমর্থকরা নুর হোসেন কাজীর সমর্থকদের ১৫/২০ টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। থানায় ৩৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামী নুর হোসেন কাজীকে আটক করেছে পুলিশ।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডুবুলদিয়া কাজী কান্দি গ্রামের নুর হোসেন কাজী ও খিদির বেপারী গংদের সাথে ১৪ বিঘা ফসলী জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে থানা ও আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলছে। গত শনিবার নুর হোসেন কাজীর নেতৃত্বে মোশারফ বেপারী, লতিফ বেপারী, দবির বেপারী ও খিদির বেপারীর ২ বিঘা জমির পাকা গম জোর করে কেটে নিয়ে যায়। এ নিয়ে খিদিরের ছোট ভাই আমির হোসেন বেপারী বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা করার কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে নুর হোসেন খিদির ও আমিরকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। সোমবার বিকেলে খিদির ও আমির হোসেন জাজিরা বউপজেলা সদর থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাজীর হাট আব্দুর রাজ্জাক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে পৌছলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নুর হোসেন কাজী ও পৌর কাউন্সিলর আলমগীর বেপারীর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ঘেরাও করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা তাদের আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকায় নেয়ার পথেই খিদির মারা যায়। ছোট ভাই আমির হোসেন এখনো আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। খিদির মারা যাওয়ার খবর এলাকায় পৌছলে নুর হোসেন মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় মাদারীপুর জেলা পুলিশ তাকে আটক করে।

খিদিরের মৃত্যু সংবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সমর্থকেরা নুর হোসেন কাজীর সমর্থক রুস্তম বেপারী, সিরাজ বেপারী, মালেক কাজী, সাইদ বেপারী, জালাল বেপারী, খবির বেপারী ও গিয়াস উদ্দিন বেপারীর বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাদের ১৫-২০টি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। সোমবার রাতেই খিদিরের চাচা দবির হোসেন বেপারী বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এতে নুর হোসেন কাজীকে প্রধান করে জাজিরা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর বেপারী, জাহাঙ্গীর বেপারী, মোস্তফা বেপারী, লিটন বেপারী, নুর মোহাম্মদ বেপারী, গিয়াস উদ্দিন বেপারী, বারেক বেপারী, সিরাজ বেপারীসহ ৩৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ডুবুলদিয়া কাজীকান্দি গ্রামের হাশেম কাজীর ছেলে নুর হোসেন কাজী একজন নিরক্ষর লোক। তিনি কোন দিনও কোথাও লেখা পড়া করেনি। মাত্র কয়েক বছর আগেও কৃষিকাজ করতো। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক নেতাদের ছত্র ছায়ায় থেকে নানান অপকর্মের সাথে জরিয়ে পরে। এক পর্যায়ে জাজিরা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটিও দখল করে নেয়। এর পর একের পর এক জমি দখল, বাড়ি দখল, চাদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে পার পাইয়ে যায়। তার বিরেুদ্ধে জাজিরা থানায় একাধিক মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে কথনো আটক করেনি।

নিহত খিদিরের চাচা দবির হোসেন বেপারী বলেন, নুর হোসেন দীর্ঘ দিন যাবৎ আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছিল। সে এলাকায় অস্ত্রধারী ত্রাস হিসেবে পরিচিত। আমাদের বাবা দাদার আমলের অনেক জমি জোর পূর্বক দখল করে রেখেছে বছরের পর বছর। গত শনিবার আমাদের ২ বিঘা জমির পাকা গম ও ধনিয়া সে জোর করে কেটে নিয়ে যায়। একারনে আমরা থানায় মামলা করলে নুর হোসেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার ভাতিজাদের খুন করার হুমকি দেয়। আমরা প্রশাসন ও সমাজের দায়িত্ববান লোকদের কাছে নালিশ জানিয়েও আমার ভাতিজাকে বাচাতে পারলাম না। আমরা খুনি নুর হোসেনরে ফাঁসি দাবি করছি।

খিদির বেপারীর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, বাড়ির কাছেই নুর হোসেন আমার স্বামীকে নৃশংসভাবে খুন করলো। আমার ১১ বছর বয়সের মেয়ে পূষ্প ও ৫ বছরের ছেলে বাহাদুরকে নিয়ে আমি এখন কোথায় গিয়ে দাড়াবো। আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ এখন কি হবে। আমি খুনি নুর হোসেন এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

জাজিরা থানার ওসি মো. ইকরাম আলী মিয়া বলেন, সোমবার রাতে ৩৫ জনের নাম সহ আরো অজ্ঞাত ১৫ জন মোট ৫০জনকে আসামী করে জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার সময় নুর হোসেনকে পার্শবর্তী জেলা পুলিশের সাহায্যে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামীদে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। নতুন করে কোন অঘটন যাতে ঘটতে না পারে এ জন্য এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

(কেএনআই/পিবি/মার্চ ১৭,২০১৫)