শরীয়তপুর প্রতিনিধি:আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর শরীয়তপুরে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে হিমাগার না থাকায় এবং হরতাল-অবরোধে আলু পরিবহন ও বিপনন সমস্যা হওয়ার কারনে শরীয়তপুরের আলু চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  জেলায় জরুরী ভিত্তিতে অন্তত একটি হিমাগার স্থাপনের দাবী আলুচাষি ও কৃষি বিভাগের।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে শরীয়তপুর জেলায় ১ হাজার ৮ শত হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল।

অনুকুল আবহাওয়া ও সার-বীজ সহজলভ্য হওয়ায় আবাদ হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। পর পর দুই বছর আলু চাষিদের লোকসান হওয়ায় মৌসুমে দর ভালো পাবার আশায় লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে আলু চাষ হয়েছে। শরীয়তপুর জেলায় অতীতের সকল রেকর্ড ছারিয়ে এবছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্তত ৫০ হাজার মেঃ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে শরীয়তপুরে। এর বেশীরভাগ আলুই চাষ করা হয়েছে ডামুড্যা উপজেলার ধানকাটি, কনেশ্বর, সিধলকুড়া ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি আলুর ১০ টাকা থাকলেও এখন দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে দাম রয়েছে ৭ টাকা। দেশে হরতাল অবরোধ থাকার কারনে কৃষকেরা ঠিকমত তাদের উৎপাদিত আলু জেলার বাইরে বিপনন ও পরিবহন করতে না পারায় আলু নিয়ে বিপাকে পরেছে।

শরীয়তপুরের চাষিরা কার্ত্তিক মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু করে অগ্রহায়ন মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত জমিতে আলু আবাদ করে। বীজ রোপনের ৮০ দিন দিন পর থেকেই আলু তোলা শুরু হয়। ১ শত ১০ দিন পর্যন্ত এ আলু মাটির নিচে থাকতে পারে। এবছর চাষিদের প্রতি শতাংশ জমিতে সাড়ে ৩ থেকে ৫ মন পর্যন্ত আলুর ফলন হয়েছে। প্রতিমন আলু উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই শত টাকা। বর্তমানে বাজার দর রয়েছে প্রতি ১ মনে ৩ শত থেকে সাড়ে ৩ শত টাকা। সার বীজ ও শ্রমিকের মুজরী দিয়ে কৃষকের এ দরে আলু বিক্রি করে খুব একটা মুনাফা হয়না।

শরীয়তপুর জেলায় স্থানীয়ভাবে কৃষকের উৎপাদিত আলু হিমাগারে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। আর হিমাগার না থাকার কারনে শরীয়তপুরের আলু চাষীরা প্রতি বস্তা আলু ৩ শত টাকা ভাড়া দিয়ে মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরের হিমাগারে রাখছেন। এতে ভাড়ার পরেও প্রতি বস্তায় তাদের পরিবহন খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত ২ শত টাকা। নিজ জেলায় হিমাগার না থাকায় আলুর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চাষিরা। তাদের দাবী জরুরী ভিত্তিতে শরীয়তপুর জেলায় একটি হিমাগার নির্মান করা হোক।

এদিগে হরতাল অবরোধের কারনে সময় মত গাড়ি না পাওয়ায় সপ্তাহের পর সপ্তাহ কৃষক তাদের আলু ফেলে রাখছে হাট বাজার ও পাকা সড়কে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সঠিক সময়ে ও কম খরচে কৃষক তাদের আলু বাজারজাত করতে পারছেনা। হিমাগার নির্মান করা না হলে আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারাবে শরীয়তপুরের চাষিরা।

সদর উপজেলার চরোসুন্দী গ্রামেরমিয়াচান বেপারী, রহিমা বেগম, চরলক্ষ্মীনারায়ন গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার, আবুল হোসেন সরদার, ডামুড্যা উপজেলার ধানকাটি গ্রামের আয়নাল হক মাদবর ও আজিজুল হক শিকদার বলেন, আমাদের এই অঘঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতিবছরই এখানে আলুর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমরা আলু চাষিরা স্থানীয়ভাবে আলু সংরক্ষন করতে না অনেক দুরে অতিরিক্ত খরচ বহন করে আলু হিমাগারে রাখতে হয়। এ জন্য আমরা কখনো আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পাইনা। আমরা সরকার অথবা দেশের স্বচ্ছল লোকদের কাছে আনুরোধ করবো শরীয়তপুরে অন্তত একটা হিমাগার স্থাপন করেত।
ছাতিয়ানি গ্রামের হাসান মালত ও প্রিয়কাঠি গ্রামের উত্তম আলী মিয়া বলেন, দেশে হরতাল অবরোধের কারনে সময়মত আমরা ট্রাক পাইনা । তাই ২/৩ সপ্তাহ যাবৎ বাজারে, পাকা রাস্তার উপরে আলু সাড়িবদ্ধভাবে ফেলে রাখছি।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, মাটি ও জলবায়ু অনুকুলে থাকায় কৃষি বিভাগ শরীয়তপুরকে আলু চাষের একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র বিবেচনা করছে । তাই প্রতি বছররই এই অঞ্চলে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। আলু চাষিদের লাভের মুখ দেখাতে জরুরী ভিত্তিতে শরীয়তপুরে একাধিক হিমাগার স্থাপন আবশ্যক।


(কেএনআই/এসসি/মার্চ২০,২০১৫)