শরীয়তপুর প্রতিনিধি :ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ মৌসুমে শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর জাজিরা সীমানায় শত শত নৌকা ভাড়া করে অবাধে জাটকা শিকার করছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র। প্রশাসনের নীরবতা ও নিস্ক্রিয়তার কারনে এই অসাধু ব্যক্তিরা প্রায় ৩ সাপ্তাহ যাবৎ ধ্বংস করে চলেছে আগামী দিনের বিপুল ইলিশ ভান্ডার।

জেলা মৎস কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, মার্চ - এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সকল ধরনের মাছের বেড়ে ওঠার সময়। এছাড়া এ সময় নদীতে কয়েকটি প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। তাই শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে প্রায় ২০ কিমি এলাকা ইলিশের ৫ম অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে ।

এর বাইরেও জেলার জাজিরা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরো অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ইলিশের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র। অভায়াশ্রমের অভ্যন্তরে কোষ্টগার্ড, মৎস বিভাগ ও ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করলেও অভায়াশ্রমের বাইরে কোন রকম অভিযান পরিচালনা না করায় শত নৌকা ভাড়া করে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডুবা থেকে কুন্ডেরচর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিমি এলাকায় স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা জেলেদের সাথে চুক্তি করে দিন রাত শিকার করে চলেছে জাটকা ইলিশ। জাজিরার বাইরেও ভেদেরগঞ্জের আরশি নগর থেকে গোসাইরহাটের বিষকাটালি পর্যন্ত আরো প্রায় ২৫ কিমি এলাকা জুরে চলছে জাটকা নিধন।

সরেজমিন পরিদর্শন করে ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার পালের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাই আণোয়ার মুন্সি, ইউপি সদস্য জুলহাস রাঢ়ি, ছোহরাব মাদবর ইদ্রিস রাঢ়িসহ অন্তত ১০ জনের একটি চক্র পদ্মা নদীর জাজিরা অংশে প্রায় ২০ কিমি এলাকা জুড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জাল-নৌকা-জেলে ভাড়া কের এনে তাদের দিয়ে কমিশনের চুক্তিতে জাটকা শিকার করাচ্ছে। অবৈধ জাটকা শিকারী জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে সব এলাকায় অভায়শ্রম ঘোষনা করা হয়েছে সেখানে কোষ্ট গার্ডের পাহারার কারনে তারা নদীতে নামতে না পারায় বেকার হয়ে পরেছে। তাই স্থানীয় এক ইউপি মেম্বার এবং অন্যান্যদের শতকরা ১০-২০ টাকা হারে চুক্তিতে এ অঞ্চলে অবাধে জাটকা শিকার করছে। এমনি প্রায় ১ শত ২০টি নৌকা দিয়ে দিনরাত পদ্মায় মাছ ধরার কথা জানিয়েছে তারা।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুলারচর এলাকার জেলে মোজাম্মেল হোসেন, তারাবুনিয়ার জেলে শহিদুল ইসলাম, চরভাগার জেলে বাচ্চু মিয়া, চরমোহনের জেলে ইদ্রিস আলী ও কাচিকাটা গ্রামের জামাল সরদার বলেন, আমাদের এলাকায় ২ মাস নদীতে জাল ফেলা সরকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পর কোষ্ট গার্ডের ভয়ে জাল নৌকা নিয়ে বাড়িতে বসেছিলাম। পালেরচরের মেম্বার জুলহাস রাঢ়ি ও সোহরাব মাদবর আমাদের ভাড়া করে এনেছে। তাদেরকে শত করা ১০-২০ টাকা দিতে হয়। আমরা মাছ ধরার পর তারাই বিক্রি করে দেয়। নদী থেকেই মাছগুলো মাওয়া হয়ে চলে যায় ঢাকাসহ অন্যান্য বাজারে। জেলেরা আরো জানান, জুলহাস রাঢ়ি একাই এনেছেন ১০ নৌকা এবং সোহরাব মাদবরেরা কয়েকজনে মিলে এনেছেন প্রায়

২৪টি নৌকা। একেকটি নৌকায় প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার মাছ ধরা পরে।
ভেদরগঞ্জের কাঁচিকাটা ইউনিয়নের দুলারচর গ্রামের জেলে কামাল মাঝি বলেন, জাটকা ধরা অবৈধ আমরা জানি, তারপরেও এনজিওর কিস্তি এবং আড়তদারের দাদনের ঋণ পরিশোধ করতেই অবৈধ জেনেও জাটকা শিকারে নেমেছি। তা না হলে যে সংসারের সবাইকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। আর দেনার দায়ে মহাজনকে জাল-নৌকা বিক্রি করে টাকা ফেরৎ দিতে হবে।
পালেরচর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জুলহাস রাঢ়ি বলেন, আমি সরাসরি কোন নৌকা ভাড়া করিনি। তবে দুলাল মাদবর, তোতা মিয়া, লতিফ সরদার, ইদ্রিস রাঢ়ি, ছোহরাব মাদবর, মান্নান মাদবর, আক্কাস বেপারী ও আনোয়ার মুন্সি মিলে মোট ৩৩টি নৌকা ভাড়া করে এনেছেন। তারাই জেলেদের দিয়ে মাছ ধরিয়ে থাকতে পারে।

শরীয়তপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস কর্মকর্তা মো. মোহসীন বলেন, শরীয়তপুরের নৌ-সীমায় ২০ কিলো মিটার এলাকা নিয়ে দেশের ৫ম ইলিশের অভায়শ্রম ঘোষনা করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। এখন ২ মাস এই ২০ কিমি এলাকায় আমরা ভ্রাম্যমান আদালত ও কোষ্টগার্ডের সহায়তায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তারপরেও অভায়শ্রমের বাইরে কিছু অসাধু লোকের জাটকা শিকার করার তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

তিন সপ্তাহেরও অধিক সময় ধরে জাজিরার নৌসীমানায় প্রভাবশালীদের জাটকা শিকারের কথা জানতে চাইলে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, পদ্মায় জাটকা শিকারের কথা আপনার কাছেই প্রথম জানলাম। এ ধরনের কোন তথ্য আমাদের জানাদের নেই। আপনি যেহেতু জানালেন, এখন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।


(কেএনআই/এসসি/মার্চ২১,২০১৫)