শরীয়তপুর প্রতিনিধি :শরীয়তপুর জেলায় বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৫০টি ইট ভাটায় প্রতিদিন কেটে নেয়া হচ্ছে ফসলের জমি ও নদীর তীর। ফলে হুমকির মুখে পরছে মহাসড়ক, জনবসতি সহ পরিবেশ। কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমান। উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতিতে পরার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

শরীয়তপুরে ৬টি উপজেলায় বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে ৫০টি ইট ভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইট ভাটায় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। কৃষি জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি কিনে নিয়ে তা ভ্যাকু মেশিন ও স্থানীয় পদ্ধতিতে কাটা হয়। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে আশে পাশের অনেক জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কোন কোন জমির মালিক ১ ফিট গভীর করে শুধু টপ সয়েল বিক্রি করছে, কিন্তু বেশীরভাগ কৃষকই মাটি বিক্রি করছে ১০-১৬ ফিট গভীর করে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের দড়িচর দাদপুর এলকায় কীর্তিণাশা নদীর তীর থেকে ইট ভাটায় মাটি কেটে নেয়ার ফলে নদীতে ভাংগনের সৃষ্টি হয়ে জনবসতি হুমকির মুখে পরেছে। শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের কোটাপাড়া সেতুর উত্তর পাড়ে মূল সড়কের গাঁ ঘেষে জমির মাটি কাটায় এ সড়টিও রয়েছে হুমকির মুখে। এছাড়াও জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় কোদালপুর মেঘনা নদীর তীর থেকে, জাজিরা উপজেলা পালেরচর, বড়কান্দি ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পদ্মার তীর থেকে গভীর রাতে মাটি কেটে বাইরের জেলার ইট ভাটায় বিক্রি করছে কয়েকটি অসাধুচক্র। এর বাইরেও জেলার ৬ উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের কমপক্ষে ১২০টি স্পট থেকে ফসলী জমির মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়। এই মাটিগুলো সড়ক ও নৌপথে বহন করছে মাটি ক্রেতাচক্র।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইট ভাটার লাইসেন্স প্রদানের সময় উল্লেখ থাকে ব্যাপকভাবে ফসলী জমি নষ্ট করে ভাটা নির্মান করা যাবেনা। এমনকি যে সকল জমিতে ফসল উৎপাদন সম্ভব নয় কেবলমাত্র এমন জমিতেই ইটভাটা স্থাপন করা যাবে। পাশাপাশি এমন সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে যে, কোন ফসলী জমির টপ সয়েূল বা জমির উপরিভাগের মাটি কেটে এবং ফসলী জমি হুমকিতে রেখে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করা যাবেনা। কিন্ত, শরীয়তপুরের চিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। এ জেলায় ৫০ টিরও অধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে ফসলী জমি দখল করে। আর ইট তৈরীর মাটিও সংগ্রহ করা হচ্ছে ফসলী জমি ধ্বংস করে।

শরীয়তপুরে এ বছর অন্তত ২০ কোটি ইট পোড়ানোর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছে ভাটা মালিকরা। প্রতি এক হাজার ঘনপিট মাটিতে ৯০০ ইট তৈরী করা সম্ভব। সেই হিসেব মতে প্রতি বছর শরীয়তপুরের ইটভাটা গুলোতে অন্তত ২২ কোটি ঘনফিট মাটির প্রয়োজন হয়। আর এই মাটির পুরোটাই সংগ্রহ হচ্ছে ফসলী জমি থেক্।ে এমনিভাবে চলতে থাকলে দেখা যাবে আগামী ২০ বছরে ফসলি জমি জেলার বর্তমান মোট আবাদী জমির অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে।

নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের ঘাগরিজোরা গ্রামের জমির মালিক আব্দুল জলিল মুন্সি ও দেলোয়ার হোসেন মুন্সি বলেন, আমাদের জমিতে ফসল করে পোষায়না তাই মাছ চাষ করার জন্য জমির মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছি। আমরা প্রতি শতাংশ জমির মাটি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ভাটা মালিক ৮-১০ ফিট গভীর করে মাটি কেটে নিবেন।

শরীয়তপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাবুল বলেন, ভাটা মালিক কখনো নিজে কারো কাছ থেকে মাটি ক্রয় করেনা। মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে আমরা মাটি ক্রয় করি। তারা কিভাবে মাটি সংগ্রহ করে সে খবর আমাদের রাখার বিষয়না। তিনি আরো বলেন, সভ্যতা বিনির্মানে ইটের প্রয়োজন আর ইট তৈরী করতে মাটির প্রয়োজন, এই সত্যটি সকলের মানতে হবে।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক মোঃ কবির হোসেন বলেন, এভাবে ফসলী জমির উপর এক দিকে ইট ভাটা স্থাপন অপর দিকে ফসলী জমির মাটি কেটেই ইট তৈরীর কাজে ব্যবহার করার কারনে আশংকাজনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে আবাদী জমি। এমনিভাবে চলতে থাকলে অচিরেই খাদ্য সংকটে পরবে জেলার ১৬ লক্ষ মানুষ। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাটি কাটা বন্ধের জন্য প্রশাসনের কার্যকরি ভ’মিকা গ্রহনের কথাও বলেছেন তিনি।


(কেএনআই/এসসি/মার্চ২২,২০১৫)