শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মাতীরে চলছে দক্ষিনাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পুরনের  কাজ। খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্টরা। এর বেশির ভাগই সংযোগ সড়ক, পূনর্বাসন ও প্রকল্প উন্নয়নের কাজ। স্বপ্নের সেতু নির্মানের বিশাল এ কর্মযজ্ঞ দেখে  বাবা-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি সব হারিয়েও খুশি পদ্মা পাড়ের শত শত মানুষ।

২০১৮ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন ও ট্রেন, এই কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে সবকিছু। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নেরর সুবিধার্থে মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মান, কনষ্ট্রাকশ ইয়ার্ড, পূনর্বাসন কেন্দ্র এবং একটি তদারকি পরামর্শক সংক্রান্ত মোট ৬টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কনষ্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সংযোগ সড়ক নির্মানের কাজ। এছারাও মূল সেতু নির্মান কাজও দৃশ্যমান, শীঘ্রই শুরু হবে নদী শাসনের কাজ। শুরু হয়েছে মূল সেতুর জাজিরা পাড়ের ৭৫টি পিলার স্থাপনের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ। এ কাজে একসাথে হাত লাগিয়েছে চীন ও বাংলাদেশের শ্রমিক-কলা কুশলীরা। পদ্মা পাড়ের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে দারুন খুশী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। শুরুর দিকে কিছুটা হাতাশা থাকলেও বিশাল এই কর্মযজ্ঞ দেখে হতাশা কেটে গেছে স্থানীয়দের। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের বাবা দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি হারিয়েও সব কিছু ভুলে গেছে সেতু নির্মানের কাজ শুরু হওয়াতে।

৬.১৫ কিলোমিটার দৈঘ্যের এই সেতু প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার শর্তে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজা নির্মান কাজ শুরু করেছে যৌথভাবে আব্দুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার এইচ.সি.এম নামের দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সারে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক সহ প্রকল্পের সকল কাজ তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। সেতু নির্মানের সার্বিক কাজ তদারকির জন্য জাজিরার নাওডোবা এলাকায় নির্মান করা হয়েছে বিশাল সেনা ব্যারাক। ইতিমধ্যে মূল সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রীজ কোম্পানীর লোক জনেরাও থাকার জন্য দৃষ্টি নন্দন ব্যারাক নির্মান করেছে পদ্মা তীরে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মানের জন্য সরকার ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১১টি ধাপে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে নাওডোবা ইউনিয়নের ১০০ নং এবং ১০১ নং মৌজার সরল খার কান্দি, মোহর আলী মাদবর কান্দি, হাজী হাছেন বয়াতীর কান্দি, সমর আলী মৃধা কান্দি, হাজী গফুর মোল্যার কান্দি, শহর আলী বেপারীর কান্দি, লতিফ ফকিরের কান্দি, সলিমুদ্দিন মাদবরের কান্দি, আহমেদ মাঝির কান্দি, হাজী জৈনদ্দিন মাদবরের কান্দি, কাদির মীনার কান্দি, জমির উদ্দিন হাওলাদারের কান্দি, আঃ মজিদ হাওলাদারের কান্দি, নঈমুদ্দিন খানের কান্দি সহ অন্তত ২৫টি গ্রামের ৪ হাজার ৮ শত ২৩ জন লোকের ১ হাজার ১ শত একর ভূমি অধিগ্রহন করে। সহ মানুষের কাছ থেকে অধিগ্রহনকৃত সেই ভূমির উপরই চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মহা কর্মজজ্ঞ।


পশ্চিম নাওডোবা গ্রামের মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমি পদ্মা সেতুতে ভিটে মাটি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একজন সন্তান। অনেক দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল ভেদকরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় আমরা সবাই খুশি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষও অনেক আনন্দিত। সেতু নির্মানের জন্য চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটিসহ বাপ-দাদার কবরের স্থানটিও ছেরে দিতে হয়েছে আমাদেরকে। তারপরেও সেতু নির্মানের কাজ শুরু হওয়ায় সব ভুলে এখন আমরা খুশি।
এলাকার লিয়াকত হোসেন বেপারী, সিরাজ মাদবর, সেতু হবার কারনে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে, তাদের ছেলে সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ বাড়বে ও জমির দাম বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করছেন এলাকার লোকেরা, দাদান বয়াতি বলেন, আমরা ঠিকমত আমাদের ক্ষতিপূরনের টাকা বুঝে পাইনি। তারপরে সেতু নির্মান হইতেছে, এতেই আমাদের গর্ব। তারা বলেন, ব্রীজ নির্মান হলে আমাদের ছেলে মেয়েদের জীবনে অনেক পরিবর্তন আসবে। এলাকায় অনেক কল কারখানা হবে। আমরা খেয়ে পরে ভালোই থাকতে পারবো।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিেিটড এর প্রকৌশলী এ বি এম ফুয়াদ আহম্মেদ জানান, আমাদের কোম্পানী সেতুর জাজিরা পয়েন্টে সাড়ে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ সহ সার্ভিস এরিয়া- ২ এর অধীনে পদ্মা রিসোর্ট, মোটেল ম্যাস, রিসোর্ট অভ্যার্থনা কেন্দ্র, ১ টি সুপারভেশন অফিস ও ৩০টি ডুপ্লেক্স ভবন নির্মানের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, সেনা বাহিনীর লোকেরা নিয়মিতভাবে আমাদের কাজে তদারকি করছেন ।
(কেএনআই/পিবি/মার্চ ২৩,২০১৫)