সঞ্জিব দাস : দেশ মাতৃকার জন্য লড়াই করতে করতে আজ বড্ড বেশি ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর উদ্দিন বেপারী। তার অনেক ছিল, আজ সব শেষ, শুধু দেশ, বঙ্গবন্ধু। এদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত অর্জন না হওয়ার বেদনায় বড় কাতর ও ব্যথিত তিনি। ১৯৪৭ সালে ফরিদপুর সদর উপজেলার শিবরামপুর স্কুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সাথে হাত মিলিয়ে যোগদান আওয়ামী লীগ ঘরানর রাজনীতির সাথে সেই শুরু, আজ পর্যন্ত শেষ হয় নাই তার সেই ছুটে চলা।

প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর কথা বলার জন্য পথে বেরিয়ে যান এই বয়সে। তার কথা মতো ১৯৬৯ সালে একটি পাবলিক মিটিং করেন শিবরামপুর স্কুলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। অনেক বাধা পেরিয়ে তার সেই মিটিংয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু যা তাকে আজও অনুপ্রানিত করে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আমাকে খুবই স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন। যে কারণে জেলার সব বাধা পেরিয়ে সেই অজ পাড়াগায়ে আসেন মিটিং করতে। আমরা সব হারানো একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা বলছি নাম মুনসুর উদ্দিন বেপারী (৮৭), বাড়ি সদর উপজেলার ইশানগোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর বেপারী বাড়িতে।

৪৩ বছর বয়সে দেশ মাতৃকার জন্য লড়ায়ে তার নাম লিখান। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ সকালে একটি সাদা গাড়ীতে করে শিবরামপুরে আসেন ঢাকা থেকে এস এম কিবরিয়া ও ফোরমান সাহেব দায়িত্ব দিয়ে যান তাকে আর আরেক মুক্তিযোদ্ধা আজহার খানঁকে শিবরামপুর স্কুলে একটি আশ্রয় কেন্দ্র ও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে। সেখান থেকে তারা নির্দেশ দিয়ে তারা চলে যান যশোরের উদ্দেশে। সেই সকালে একটি মিটিং করেন তারা ছিলেন রঙ্গন কৃষ্ণ গোস্বামী, আজহার খানঁ, রহিম মাতুব্বর, তালেব মুন্সি, শুরেস্বর সাহা, হালিম শেখসহ অনেকে সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে গ্রামে ঘুরে চাল ও গম সংগ্রহ করে শরনার্থীদের সাহায্য করা সেই বিকেল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসতে শুরু করে শিবরামপুর শরনার্থী শিবিরে।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর কথামত যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড় এই কথা শুনে যুদ্ধের প্রস্ততি নেন ঢাল, সড়কি, রামদা, তীর, কাতরা, ধুনুক ও তলোয়ার নিয়ে শিবরামপুরে একটি দূর্গ গঠন করেন। রাস্তার উপর বড় বড় গাছ কেটে ফেলে বাধা প্রদান করেন। প্রতিটি হাট বাজারে গিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুত হতে মিটিং করে জনগণকে সজাগ করেন। এরপর শুরু তার মূল যুদ্ধ যাতে তাকে সহায়তা করেন বাংলাদেশী ই পি আর বাহিনী। প্রতিদিন রাতে গোয়ালন্দ ঘাটে ই পি আর তাকে রাইফেল চালানো শিখিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন।

২১শে এপ্রিল পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী গোয়ালন্দ ঘাটে আক্রমণ করলে তিনি দ্রুত একটি সাইকেল নিয়ে এলাকার প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে খবর দেন যাতে তারা নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে যেতে পারেন। তার বেদনার একটি কারণ খুবই কষ্ট দেয় সেটা হলো ই পি আর এক সদস্য, আজহার খানঁ ভারতে ট্রেনিংয়ে উদ্দেশে যাওয়ার সময় মাচ্চর ইউনিয়নের লক্ষিপুরে বুধাই ঘোষের বাড়িতে খাওয়ার জন্য যান। সেই বাড়ি তাদের আশ্রয় দিয়েছিলো। এই কারণে বিহারীরা তার একটি ছেলেকে মেরে ফেলে। যা আজও তিনি মেনে নিতে পারেন নাই। বারখাদা ব্রিজে হানাদার বাহিনী ক্যাম্প করেছিলো সেই ক্যাম্পে সে নফেল, রশিদ, সত্তার, সালাউদ্দিনসহ অনেকে আক্রমণ করেন তাদের অস্ত্রের কাছে তারা পিছু হটলেও পাকিস্থানীদের একজনকে মারতে সক্ষম হন। তিনিসহ অনেকে সাইনবোর্ড, খানখানাপুর, তেনাপেচাঁ ব্রীজে যুদ্ধে পাকিস্থানী ক্যাম্পে আক্রমণে অংশগ্রহন করেন তারা তেমন সফলতা না পেলেও পাকিস্থানী বাহিনীদের বুকে ভয়ের আগুন ধরাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তিনি জানান, সেই যে যুদ্ধ শুরু করেছিলাম আজও সেই যুদ্ধ শেষ হয় নাই। আমি যুদ্ধ করেই বেচেঁ আছি। আর আমার সেই যুদ্ধে এখন সহয়তা করেন মুক্তির পক্ষের কিছু এলাকার মানুষ। তাদের আর্থিক সহায়তা নিয়ে কোন মতে বেচেঁ আছি। দুঃখের কথা কি আর বলব ছয় ছেলের ভিতর বড় ছেলে মারা গেছে অন্য ছেলেরা কেউ আমাকে দেখে না, আমার চার মেয়েই বিধবা। নিজের ভিটে মাটি কিছুই নেই নিজের একটু কবর দেওয়ার জন্য কোন মাটি নেই। এখন কোথায় আমার কবর হবে সেই কথা ভাবি। কিন্তু আমার এককালে অনেক ছিলো। দেশ দেশ করে আমি সব হারিয়েছি, হায়রে আমার সোনার বাংলা, হায়রে আমার নেতা বঙ্গবন্ধু। তার সর্বশেষ কথাটি হলো এমন আমি সংগ্রাম করে বাঁচতে জানি, সংগ্রাম করেই বেচেঁ যাব আমার নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানের মতো।

(এসডি/এএস/মার্চ ২৪, ২০১৫)