তপন বসু : ধূপ নিজে জ্বলে অন্যকে যেমন গন্ধ বিলায়, ঠিক তেমনি শেখের বেটিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়ে নিজের সর্বশেষ জায়গাটুকুও বিক্রিও করতে হয়েছে এক পুজারীনিকে। সাধ ছিল তার, কিন্তু সাধ্য ছিল না।

আর্থিক সংকটেরে পরেও নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর মনোবলের কাছে আট বছর পরে শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন কোটালীপাড়া উপজেলার ধারাবাইশ গ্রামের গনেশ পাগল সেবাশ্রমের পূজারিনী রূপমালা। আট বছর আগে শেখের বেটি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেও তার আট বছর পর রূপমালার ইচ্ছা পুরণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দশ দুর্গার পুজা। প্রতিদিন পুজার পাশাপাশি সন্ধ্যায় চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিন রাত সমান তালে পুজা মন্ডপে এখন লোকে লোকারণ্য।

উপজেলার ধারাবাইশ গ্রামের গনেশ পাগল সেবাশ্রমের পূজারিনী রূপমালার ছেলে যতীন বৈরাগী জানান, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ধারাবাশাইল কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে তার মা জন সম্মুখে মানত করেন ‘ শেখের বেটি, (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে) শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে তিনি তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় দশ দুর্গার পূজা দিবেন’। ওই বছর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু গত আট বছরেও অর্থ সংকটের কারনে তার মায়ের মানত পূজার আয়োজন করতে পারেনি তারা। মায়ের ইচ্ছা পুরণ করার জন্য, অবশেষে নিজেদের শেষ সম্বল ৪ কাঠা জমি বিক্রি করে দশ দূর্গার মূর্তি নির্মানের কাজ সম্পন্ন করেন। তবে জমি বিক্রির টাকায়ও সকল খরচ সংকুলন করা যাবেনা বলেও তিনি জানান।

রুপমালা জানান, আট বছর আগে তিনি যখন এই পূজার কথা এলাকাবাসীর কাছে প্রকাশ করেন তখন অনেকেই তাকে হাসি ঠাট্টা আর বিদ্রুপ করেছেন। কিন্তু তার মনোবল আর একাগ্রতার কথা জেনে তার ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপ দিতে অন্য কোন ব্যাক্তি এগিয়ে না এলও তার ছেলেদের একমাত্র ভবিষ্যত জমিটুকু বিক্রি করে তার মানত পূজার সহায়তা করছে। দেবী দুর্গার ১০৮টি রূপ রয়েছে। এর মধ্যে এখানে নব দুর্গা, স্কন্দমাতা, কুশমান্ডা, চন্দ্রঘন্টা, মহাগৌরী, কাত্যায়নী, ব্রহ্মচারিনী, শৈলপুত্র, সিদ্ধিদাত্রী, কালরাত্রী এই দশটি রূপের পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

ইতোমধ্যে আমবাড়ী গ্রামের শ্রীবাস গাইন সম্পন্ন করেছেন দশ দূর্গা প্রতিমা নির্মানের কাজ। শ্রীবাস জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। তবে এর আগে তিনি নড়াইল ও পিরোজপুরে নব দুর্গা প্রতিমা নির্মান করেছেন। দশ দুর্গা প্রতিমা তৈরি তার জীবনে এটাই প্রথম। এই প্রতিমার কাজ শেষ করতে প্রায় দেড়মাস সময় লেগেছে। গত বুধবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পূজা শুরু হয়েছে। সচরাচর এমন পুজা চোখে না পড়ায় এক মন্দিরে নির্মিত দশ দূর্গার এই পুজাকে কেন্দ্র করে সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে চলছে আনন্দের বন্যা।

(এএস/মার্চ ২৬, ২০১৫)