কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : শ্রমের টাকা ফেরত চাই, আমরা বাঁচতে চাই এ দাবিতে শতশত নারী-পুরুষ শ্রমিক কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ শেষে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের সামনে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে।

রবিবার দুপুরে উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চার শতাধিক শ্রমিক এ বিক্ষোভ শেষে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগপত্র প্রদান করে। এ সময় শ্রমিকরা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মুসলিম এইড ইউকে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ করেন।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর ই আর প্লাস-দুর্যোগ ও জলবায়ু প্রভাব সহন প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার,ডালবুগঞ্জ ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের ২৫’শ নারী-পুরুষ শ্রমিক গত দুই বছরের চুক্তিতে ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা মেরামত ও খাল কর্তন করে। এলজিইডি’র তদারকিতে মুসলিম এইড ইউ কে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।

জানাযায়, দুই বছরের চুক্তি শেষে প্রতি শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা প্রদান করার কথা। কিন্তু হঠাৎ করে প্রকল্পের কাজ শেষে মাত্র এক হাজার শ্রমিককে এ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের দাবি তাদের এখনও প্রতি শ্রমিকের এক মাসের প্রশিক্ষনের ৫’শ ৫৩ টাকা ও সাড়ে ২২ কেজি করে চাল বকেয়া রয়েছে। এছাড়া তাদের প্রত্যেকের আড়াই হাজার থেকে চার হাজার টাকা সঞ্চয় রয়েছে। কিন্তু তাদের এই টাকা শোধ না করেই মাত্র এক হাজার শ্রমিক বাছাই করে তাদের ওই টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলিম এইড কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী তারা (২৫’শ শ্রমিক) এখনও ১৩ লাখ ৮২ হাজার পাঁচশ টাকা এবং ৫৬ হাজার ২৫০ কেজি চাল পাবেন। এছাড়া দুই বছরের কাজ শেষে ২০ হাজার টাকা করে পাঁচ কোটি টাকা পাবেন। কিন্তু মুসলিম এইড কর্তৃপক্ষ মাত্র এক হাজার শ্রমিককে তাদের পাওনা টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এই শ্রমিকরা।

ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চর গ্রামের মতিয়া বেগম বলেন, দুইডা বছর কাম কইর‌্যা কতো রাস্তা ঘাট বানছি। খাল কাটছি। এ্যাহন মোর ঘর ভাইঙ্গা গ্যাছে। কিন্তু মোর টাহা জমা থাকলেও মুই এ্যাহন ঘর উডাইতে পারি না।

চর গঙ্গামতি গ্রামের কোহিনুর বেগম বলেন, দুই বছর কাজ করার পর হুনি মোরা টাহা পামু না। তাইলে আমাগো দিয়া বইষ্যা-কাঁদার মধ্যে কাজ করাইলো কন। যাগো অফিসারগো লগে খাতির আছে হ্যাগো নাম নেছে। তাইলে আমাগো টাহার কি হইবে।

চর চাপলী গ্রামের মিনারা বেগম বলেন, আমার গ্রুপে ২৫ জন লেবার। হগলডির ৩/৪ হাজার টাহা কইর‌্যা সঞ্চয় জমা। হ্যারা টাহা না পাইলে মুই গ্রুপ লিডার হিসাবে সবাই আমারে ধরবে। মুই এ্যাহন হ্যাগো কি জবাব দিমু।

ডালবুগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আ. সালাম সিকদার বলেন, তার ইউনিয়নে ৮৫০ জন শ্রমিক কাজ করলেও ৩৪০ জনকে টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যারা কাজ করেছে সবাই দুঃস্থ। এখন কাদের নাম তালিকায় দিবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আমরা। এছাড়া মুসলিম এইড যে তালিকা তৈরি করেছে তাতে অনেক দুঃস্থদের পরিবর্তে স্বাবলম্বীদের নাম আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। একইভাবে ডালবুগঞ্জ ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের শ্রমিকরাও তাদের পাওনা টাকার দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

মুসলিম এইড ইউ কে পটুয়াখালী কো-অর্ডিনেটর মো. এজাহার আহমেদ জানান, তারা মাঠ পর্যায়ে সার্বে করে এই তালিকা করেছেন। কিন্তু সরকার টাকা না দিলে আমরা কি করবো। সরকার প্রথম দফায় এক হাজার জনকে তাদের পাওনা পরিশোধের চিঠি দিয়েছে। তারা সেই অনুযায়ী কাজ করছেন।

এলজিইডি’র কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আ. মন্নান জানান, নিয়ম অনুযায়ী তারা কাজের তদারিক করেছেন। গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে মুসলিম এইড ইউ কে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এই প্রকল্প শুরু হলেও শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু গত মাসে এক হাজার শ্রমিককে তাদের পাওনা পরিশোধের জন্য সরকারি এক চিঠি পেয়ে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুঃস্থ্য, প্রতিবন্ধী, বিধবা ও অস্বচ্ছল এক হাজার শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের উদ্যেগ নেয়া হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান আ. মোতালেব তালুকদার বলেন, শ্রমিকরা তার অফিসে এসে তাদের অসহায়ত্বের কথা বলেছেন। তালিকা তৈরিতে বিভিন্ন অনিয়মের কথা ও তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

(এমকেআর/এএস/মার্চ ২৯, ২০১৫)