পঞ্চগড় প্রতিনিধি : ঝোপ-ঝাড়, গুচ্ছবন বা বাগানের ভেতরেমৌবাক্স বসিয়ে ভাল আয় করেছেন অনেকে। বাড়িতে ছেলে মেয়ে পরিবারসহ মধু খাওয়া হচ্ছে আবার ব্যাবসাও হচ্ছে ভাল।

এ বছর ভারত ও চীন বাংলাদেশ থেকে মধু আমদানী করবে বলে দামও পাওয়া যাবে বেশী। এমনটাই বলছিলেন পঞ্চগড়ে সিরাজগঞ্জের মধুচাষী উত্তরবঙ্গ মৌকল্যান সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ।

পঞ্চগেড়র বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ১৫০ টন মধু আহরনের লক্ষ্য নিয়ে ১২০ জন মধু চাষী তিল ক্ষেতের আশে পাশে প্রায় ২৪০০০ মৌ কলোনী বসিয়েছেন। মৌমাছির বাক্স কে বলা হয় মৌ কোলনী ।

চলছে তিলের মধু আহরন :
পঞ্চগড়ের ২০ জন এবং সিরাজগঞ্জ,ময়মনসিংহ,রংপুর থেকে আসা ১০০ জন চাষী প্রতিজনে ২০০ থেকে ২৫০ টি মৌবাক্স বসিয়েছেন। তিলের ফুল থেকে মধু আহরন করে প্রত্যেকটি মৌবাক্স থেকে সপ্তাহে ৪/৫ কেজী মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মৌবাক্স অষ্ট্রেলিয়ান বংসদ্ভুত এফিস মিলিফিরা নামের মৌমাছিরা মধু আহরন করছে। এছাড়া কানাডা,আমেরিকার নানা জাতের মৌমাছিও চাষ হয়। ১০/১৮ টি কাঠের ফ্রেমের বাক্সে ঠিক কত গুলো মৌমাছি থাকে জানাতে পারেননি মৌচাষিরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে তিলের আবাদের আশে পাশে পতিত জমি বা বাগানের ভেতরে তাবু ফেলেছে মৌচাষীরা। আর আশে পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে মৌবাক্স। মৌমাছির গুন গুনানী আর মৌ মৌ গন্ধে ভাসে সারা এলাকা। তিলের সময়ে দুমাস এই মধু সংগ্রহ চলবে। মধু চাষী বাবুল জানান এই মধু তারা পাইকারী কেজী প্রতি ১৬০ টাকা এবং খুচরা মুল্য ২০০ টাকা দরে বিক্রী করেন। কৃষি সম্পসারন বিভাগ জানিয়েছে এ বছর পঞ্চগড়ে ১০০০ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ করা হয়েছে। মধ্যখানে ব্যাপক খরার মুখোমুখি হওয়ায় তিলের পরাগায়ন সঠিক ভাবে হয়নি। তবে এর প্রভাব মধুচাষে খুব একটা পড়েনি বলে জানান মধুচাষীরা।

মৌচাষে লাখোপতি :
মৌচাষী বাবুল জানান তিনি আগে দিন হাজিরা দিতেন। ৭ বছর আগে বাড়ির গবাদি পশু বিক্রী করে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মাছি কেনেন। তিনি এ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকার মাছি বিক্রী করেছেন। ৬/৭ লাখ টাকার মধু বিক্রী করেছেন। বর্তমানে মধু ও মাছি মিলে তার দেড় লাখ টাকার পুজি রয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে আবাদী জমি কিনেছেন,বিল্ডিং বাড়ি করেছেন। তেতুলিয়ার মৌচাষী জামান বলেন আগে বাঁশবেতের কাজ করতাম। পরে সিরাজগঞ্জে গিয়ে মধু চাষ করতে শিখি।আমার মৌবাক্স আছে ৩০০ টি বছরে প্রায় ৬/৭ লাখ টাকার মধু বিক্রী করি। বিসিক পঞ্চগড়ের ডেপুটি ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান বলেন মধুচাষে খরচ কম,সময়ও বেশী লাগেনা। খামারে সপ্তাহে ১ দিন সময় দিলেই হয়ে যায়। তাই মধু চাষে পঞ্চগড়ে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে।

পঞ্চগড়ে মধু চাষের বিপুল সম্ভাবনা :
প্রায় ১৬/১৭ বছর আগে থেকে পঞ্চগড়ে বাক্স মধু চাষ শুরু হলেও গত কয়েক বছরে ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে। অন্যান্য জেলা থেকে পঞ্চগড়ে বাক্স মৌমাছি চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কারন এই জেলায় মৌচাষ উপযোগী সব ধরনের আবাদ হয় । শরিষা, তিল, ধনিয়া, বাদাম, ভূটাটা, লিচু, আম, কালোজিরা, ইত্যাদি ফশল থেকে বাক্স মৌমাছি চাষের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা যায়। পঞ্চগড়ে প্রায় সব ফসলই হয় বলে এখানে মধু চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পঞ্চগড় জেলা মৌকল্যান সমিতির সভাপতি মনির হোসেন।

তিনি আরও জানান, বিসিক থেকে এ বছর ৩৭ জন চাষীকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষন ব্যপক হারে দিলে এবং প্রচারনা চালালে পঞ্চগড়ের কৃষক,বেকার যুবকরা কৃষি করার পাশাপাশি মৌচাষ করে সাবলম্বি হতে পারে। এ ছাড়াও কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ ও সরকারী বেসরকারী ব্যাংকগুলো সহায়তা প্রদান করলে বেকারত্ব কমাতে মধু চাষ গুরুত্বর্র্পূন ভূমিকা রাখতে পারে।

বাক্স মৌমাছির পরিপাটি জীবন :
একটি মৌমাছির বাক্সে রানী থাকেন একজন। পুরুষ মৌমাছি থাকেন কয়েকশ। রানী তার জন্মের ১৫/২০ দিনের মধ্যে একটি পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলিত হন জীবনে একবার । তবে যেখানে সেখানে নয় ভূমি থেকে ৪/৫ কিলোমিটার উপরের আকাশে। রানীর সাথে মিলিত হওয়ার সাথে সাথেই পুরুষ মৌমাছিটি মারা যায়। রানী এক বার মিলিত হয়েই ডিম দেন প্রায় দুবছর। প্রতিদিন রানী ডিম দেন ২৫০০/৩০০০। তবে শেষের দিকে রানীকে ট্র্যাজিক পরিনতির মুখোমুখি হতে হয়। ডিম দেয়া কমে গেলে, মানে ১০০০/৫০০ তে নেমে এলে শ্রমিক মৌমাছিরা রানীকে হত্যা করে। আসে আরেকটা নতুন রানী।

শ্রমিক মৌমাছিরা মধু আহরনে ব্যস্ত থাকে। তারা মধু আনছে নাকি বিষ আনছে তার পরিক্ষা নিরীক্ষা করে চেকার মৌমাছি। কোন শ্রমিক মৌমাছি মধুর বদলে বিষ আনলে সাথে সাথেই তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে দাড়োয়ান মৌমাছি। দারোয়ান মৌমাছি মধু শোধনও করে।

(ওএস/এস/মে ১২, ২০১৪)