নিউজ ডেস্ক : জীবনে সফল হতে কে না চায়? সাফল্যের জন্য চাই আত্মবিশ্বাস। যে কোনো কাজই আত্মবিশ্বাস নিয়ে করলে তা হয়ে যায় সহজ।

কিন্তু এই আত্মবিশ্বাস অর্জন করাটাই অনেক সময় আমাদের জন্য হয়ে উঠে কঠিন। জীবনে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রশ্ন যখন সামনে চলে আসে ঠিক তখনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস না থাকলে জীবনে সাফল্যের দেখা পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়।

মনোবিজ্ঞানী বেকি ব্ল্যালক মানুষের আত্মবিশ্বাস নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করে বলেছেন, এটি এমন এক দক্ষতা যা নিজেই শেখা যায়। আসুন জেনে নেয়া যাক আত্মবিশ্বাসী বাড়ানোর উপায় প্রসঙ্গে তিনি কী বলেছেন।

সরিয়ে দিন নেতিবাচক ভাবনা
প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ৬৫ হাজার চিন্তা করে থাকে। এসব চিন্তার ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই নেতিবাচক। এগুলো হতে পারে কোনো ভয়ের বিষয়বস্তু বা সম্ভাবনার কথা কল্পনা। কোনো আগুন ধরলে আপনার হাত যদি পুড়ে যায়, তাহলে মস্তিষ্ক পরবর্তীতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার জন্য খুবই সতর্ক হয়ে যায়। এ সতর্ক হওয়ার ফলে তৈরি হয় ভয়ের। যা পরবর্তীতে নিজের বিপক্ষে কাজ করা শুরু করে। কিন্তু আপনি যদি বুঝতে পারেন, মস্তিষ্ক এভাবে কাজ করে এবং সেই নেতিবাচক ভাবনাকে সরিয়ে রাখেন তাহলে তা সত্যিই কাজের হয়। এজন্য আপনাকে বুঝতে হবে যে, এগুলো শুধুই চিন্তা। এগুলো সবসময় সত্যিকার অবস্থা তুলে ধরে না।

লক্ষ্যে থাকুন অবিচল
প্রতিটি মানুষের জীবনে লক্ষ্য থাকা উচিত এবং সেই লক্ষে থাকতে হবে অবিচল। অথচ ‘আপনি কি করতে চান?’ বা ‘আপনি কি হতে চান?’ বহু মানুষকে এমন জিজ্ঞাসা করলে তারা পরিষ্কার করে কোনো উত্তর দিতে পারে না। কিন্তু এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার উত্তর জানা উচিত। আপনি যেখানে যেতে চান, তার একটি পথনির্দেশ থাকা উচিত আপনার।

প্রস্তুত থাকুন উত্থান-পতনের জন্য
আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করার জন্য ব্যর্থতা দায়ী নয়, দায়ী নয় সাহায্য পাওয়ার অভাবও। আমরা কোনো প্রচেষ্টার পর জানতে পারি ঠিক কী কারণে তা ব্যর্থ হলো। এরপর আমরা তার জন্য অন্য কোনো প্রচেষ্টা শুরু করতে পারি। যত বেশি উত্থান-পতন হবে, আপনার লক্ষ্য ততই নিকটে আসার মতো আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।

কাজের আগে প্রস্তুতি
প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য খুবই দরকারি। আপনার কি বক্তব্য দিতে হবে? অনেকবার অনুশীলন করুন, রেকর্ড করুন ও শুনুন। প্রথমবার গুরুত্বপূর্ণ কারো সঙ্গে দেখা করবেন? সম্ভাব্য সমস্ত পদ্ধতিতে তার সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করুন। ইন্টারনেট এ ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। যেকোনো বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুত থাকলে তা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে।

শ্বাস-প্রশ্বাসে আত্মবিশ্বাস
এ উপায়টি খুবই সহজ। শ্বাস নিলে আপনার দেহ অক্সিজেন গ্রহণ করে। বড় করে শ্বাস নিলে আপনার রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবেশ করে। এতে আপনার মস্তিষ্কের চেতনা বৃদ্ধি পায়। কোনো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে বড় করে শ্বাস নেওয়া এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বড় করে শ্বাস নিতে অভ্যস্ত না হন, তাহলে এখনই তার অভ্যাস করুন।

কৃতজ্ঞতাবোধ প্রখর করে তুলুন
প্রত্যেক দিন শুরু করুন কিছু কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে। আপনি যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তা পৃথিবীর সাতশ’ কোটি মানুষের অধিকাংশেরই নেই। আপনি যদি দিনের শুরুতেই এসব বিষয় আপনার দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রবেশ করাতে পারেন, তাহলে তা নিঃসন্দেহে আপনার সারা দিনের কার্যক্রমে ভালো প্রভাব রাখবে।

বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে পড়ুন
আপনার নিজস্ব এলাকার একটি মজার বিষয় হলো, একে বাড়ানো যায়। প্রতিদিন যদি আপনি নিজস্ব এলাকার বাইরে বের হন, তাহলে তা প্রতিদিন বড় হবে। আর যদি সে এলাকার ভেতরেই থাকেন, তাহলে তা ক্রমে ছোট হতে থাকবে। এ কারণে নিজের গণ্ডীর বাইরে বের হওয়া হতে পারে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অন্যতম পদক্ষেপ।

সমালোচনা গ্রহণ করুন
আপনি যদি এগিয়ে যেতে থাকেন তাহলে বিরোধী পক্ষ আপনাকে প্রশ্ন, সমালোচনা, সন্দেহ এবং নানাভাবে তাড়া করবে। এটা হতে পারে একটা ভালো বিষয় যে, আপনি এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে পাশাপাশি আপনার সমালোচনাকে গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে হবে।

পরামর্শকে গুরুত্ব দিন
আপনি যে পথেই থাকুন না কেন, সে পথে পাবেন আপনার পূর্বসুরী। তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। তাদের মাঝ থেকে খুঁজে নিন আপনার আদর্শ।

সঙ্গী বাছাইয়ে সতর্কতা
আপনার বেশভূষা, ইতিবাচকতা-নেতিবাচকতা ইত্যাদি তৈরি হয় আশপাশের পাঁচজন মানুষের গড় থেকে। এ কারণে কাদের সঙ্গে আপনি ঘোরাঘুরি করছেন, এ বিষয়ে সতর্ক হোন। যেসব মানুষ আপনাকে উৎসাহ দেয় এবং উচ্চ স্থানে যেতে উৎসাহিত করে তাদের সঙ্গে যাতায়াত করুন।

প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও অনুশীলন
বহু তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, পর্যাপ্ত ঘুম, অনুশীলন ও পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাবার আপনার মুড ভালো করবে এবং কর্মক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলবে। প্রতি সপ্তাহে তিনবার মাত্র ২০ মিনিটের শারীরিক অনুশীলন আপনাকে বিষণ্ণতা ও অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগ থেকে দূরে রাখবে।

সাহায্য নিন, সাহায্য করুন
আপনি যা চাইছেন, তা মানুষকে অনুমান করতে দেবেন না। এ বিষয়ে আপনার অনুমান করতে হবে বিষয়টি কী। কোনো বিষয়ে মানুষের সাহায্য চাইলে তাদের আগ্রহ দেখে আপনি অবাক হবেন। বেশিরভাগ মানুষই সাহায্য করার জন্য আগ্রহী থাকেন এবং খুব কম মানুষই ‘না’ বলেন।

(ওএস/এস/মে ১২, ২০১৪)