প্রবীর সিকদার : দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা এখন একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার ভেতরেও রয়েছে গভীর বাণিজ্য। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান 'জেহাদ'কে আমার মনে হয় নিছক ড্রামা ; দুর্নীতি আর দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন সমান তালে চলবে ; চলবে পক্ষে বিপক্ষের মধ্যে অন্ধকারের লেনদেন, রমরমা বাণিজ্য।

প্রিয় পাঠক, সোনার পাথরবাটি কি হয় ? হয় না। সোনা দিয়ে নয়, পাথর দিয়েই তৈরি করতে হয় পাথরবাটি। দুর্নীতি নির্মূল করবে কে ? মসজিদের ইমাম কিংবা মন্দিরের পুরোহিতরা ? নাকি দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনগুলো ? অবশ্যই এদের কেউ নয়। দুর্নীতি নির্মূল করবে তারাই, দেশ যারা পরিচালনা করেন অর্থাৎ রাজনীতিবিদরা। ওই রাজনীতিবিদরা যদি সৎ না হন, কারো পক্ষেই দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব নয়। খুবই অপকৌশলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, টাকা পয়সা লুটপাটই দুর্নীতি। নীতিহীনতা যে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি, সেটা বেমালুম ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। নীতিহীন রাজনীতিই যে সকল দুর্নীতির মূল, সেটা স্বীকার করতে এতো দ্বিধা কেন? সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু নীতিহীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেন না। এ এক আজব ধারার গজব আর কী !

আমরা কি করে নীতিহীন রাজনীতির শিকার হলাম, তা কি কেউ একবার ভেবে দেখেছি ! আমাদের দেশে নীতিহীন রাজনীতির উৎস হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অপরাজনীতি। পঁচাত্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করে একাত্তরের প্রিয় বাংলাদেশকে 'মিনি পাকিস্তান' বানানো হয়েছে ; অবাধে চাষ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অপরাজনীতির। ' মানি ইস নো প্রবলেম'- এই কুমন্ত্রনায় সুস্থ ধারার রাজনীতি ধ্বংস করে নীতিহীন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই অপধারার রাজনীতিতে আক্রান্ত হয়েছি আমরা সবাই। রাষ্ট্রযন্ত্রই আমাদেরকে দুর্নীতিবাজ বানিয়েছে। আজ আমরা যারা দুর্নীতি করি তারা দুর্নীতিবাজ ; আবার আমরা যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জেহাদ' করি তারাও দুর্নীতিবাজ। আমাদের নীতিহীনতা আজ আমাদেরকে এই তলানিতে নামিয়েছে। তাহলে উপায় কিংবা পথ ?

দেশে দুর্নীতি থামাতে পথ বা উপায় একটিই, আর সেটি হচ্ছে রাজনীতিতে আবার নীতির ধারা ফিরিয়ে আনা। রাজনীতিতে নীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার আগে আমাদেরকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো, দেশ ও দেশের রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অপরাজনৈতিক ধারা নির্মূল করা। আমরা যদি দেশের রাজনীতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় ফিরিয়ে নিতে পারি তবেই সুস্থ ধারার রাজনীতি তথা নীতির রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। আর এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে রাজনীতিবিদরা যখন নীতিবান হয়ে উঠবেন তখনই শুধু সম্ভব দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল কিংবা দুর্নীতিকে একটি সহনীয় পর্যায়ে শিকলবন্দি করে রাখা।