পিরোজপুর প্রতিনিধি : সহপাঠির বাড়ি আশ্রয় নিয়ে এক পায়ের হত দরিদ্র মেয়ে জোছনা সম্পন্ন করলো প্রথম দিনের এইচ এস সি পরীক্ষা। পিরোজপুর সদর উপজেলার মোহাম্মদ জলিল শেখ মেয়ে জন্ম নেয়ার পর শখ করে নাম রেখেছিলেন জোছনা। 

নাম জোছনা হলেও ওর চলার পথটা অন্ধকারে ঢাকা পরে আছে সেই শৈশব বেলা থেকে। জোছনার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাত বছর বয়সেই এক বাত জ্বরে তার বাম পা অচল হয়ে যায়। দরিদ্র বাবা মা ইচ্ছা থাকা সত্বেও মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি। এমন কি কিনে দিতে পারেননি ফোম দিয়ে গড়া আরাম দায়ক কোন ক্রাস। লোহার রড দিয়ে তৈরি শক্ত ক্রাসে ভর দিয়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে স্কুলে পৌছাতো সে। এস এস সি পাশ করার পর ভর্তি হয় শহরের এক মাত্র বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আফতাব উদ্দিন কলেজে। দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পরই বাবার আর্থিক দেনা পরিশোধ করতে না পারার কারনে পালিয়ে এলাকা ছাড়ে তার পরিবার। চট্রগ্রামে গিয়ে দাড়োয়ানের চাকুরি নেয় তার বাবা। সেই সাথে অনিশ্চিৎ হয়ে যায় জোছনার পড়াশুনার ভবিষ্যৎ। শুরু হয় কলেজের ফর্ম ফিলাপ। জোছনা বান্ধবীদের মাধ্যমে কলেজের অধ্যক্ষ সহদেব চন্দ্র পালের সাথে যোগাযোগ করে কান্না কাটি করে তার পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানায়। শিক্ষক রা কযেকজন মিলে চট্রগ্রাম থেকে আসা এবং ফর্ম পুরনের সুযোগ করে দেন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ গ্রহন তখন ও অনিশ্চিত। পাওনাদারের ভয়ে এলাকায় প্রবেশ করতে পারছেনা ওর পরিবার। পরে সাহায্যের হাত বাড়ায় তারইএক সহপাঠি রিনা আক্তার। রিনার আশ্রয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে জোছনার এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন নিশ্চিত হলো। এতে ও যেমন সস্তি পেয়েছে খুশি হয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষও। এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ সহদেব চন্দ্রপাল বলেন, মেয়েটির পরীক্ষায় অংশগ্রহন সম্ভব হওয়ায় ভিশন ভালো লাগছে। রেজাল্ট ভাল করলে ভবিষ্যত পড়াশুনার ব্যপারে সহযোগীতা দেয়া হবে। জোছনার বাবা পিরোজপুর সদর উপজেলার আলামকাঠি এলাকার মোহাম্মদ জলিল সেখ বলেন, মেয়ের প্রবল পড়াশুনার আগ্রহ কিন্তু আমি গরীব মানুষ সবটা চালাইতে পারিনা। মাইয়াডার হাঁটা চলা করতে কত কষ্ট হয় আইজ পর্যন্ত ওরে একজোড়া দামি লাঠি কিনা দিতে পারিনাই। বই খাতা দরকার মত দিতে পারিনাই। তবু মেয়ে আমার পড়বে। জোছনা এ প্রতিবেদককে জানায়, মা বাবা কাছে না থাকায় খারাপ লাগছে। এক পা না থাকার কষ্ট থেকেও বড় কষ্ট ওই দারিদ্রতা । তবু সে হার মানতে চায়না পড়াশুনা শিখে উপার্জন করতে চায় সুস্থ আর দশ জনের মতই দেনা শোধ করে বাবা মা কে করতে চায় ঋণ মুক্ত।
(এসএ/পিবি/এপ্রিল ০১,২০১৫)