মাদারীপুর প্রতিনিধি : আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে অবাধে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের জন্য গত অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে মাদারীপুর শহররক্ষা বাধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় সাময়িকভাবে বাধটি সংস্কার করলেও দীর্ঘস্থানীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে শহররক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ বাধটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আশংকা দেখা দিয়েছে। তারা  দ্রুত এটি সংস্কারের দাবী জানিয়েছে।

এলাকাবাসী, সংশ্লিষ্ট ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কোন নিয়মনীতি না মেনে আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে অবাধে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় গত অক্টোবর মাসে হঠাৎ করে মাদারীপুর শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড তাৎক্ষণিকভাবে একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে কিছু বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়। ঐ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টরা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শহররক্ষা বাঁধ মেরামত করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রায় ৬ মাস হলেও এখন পর্যন্ত বাধটি মেরামতের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। ফলে ভরা মৌসুমে বাধটি রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা এই নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আশংকা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা চরমুগরিয়া মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক আলী আকবর খোকা বলেন, ইতিমধ্যে নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। বছরের শুরু যখন নদীতে পানি কম থাকে তখনই বাধের সংস্কার করা উচিত ছিলো। এখনই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের কাজ না করলে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে তখন আর কোন কিছুই করার থাকবেনা।

তিনি আরো বলেন, বাধের পাশেই বসতবাড়ি হওয়ায় মাঝে মধ্যেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। ভয়ে থাকতে হয় কখন বাধ ধসে ভিটাটুকু কেড়ে নিয়ে যায়। শুধু আমার নয় এখানে অনেক পরিবার রয়েছে যাদের ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হবার আশংকায় দিন কাটিয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত এটা স্থানীয়ভাবে সংস্কার দরকার।

বাধ সংলগ্ন দোকানদার কালাম হোসেন, সুমন, রুবেল বাড়ির মালিক আশরাফ হোসেন, জয়নাল হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারি না থাকায় বাঁধসংলগ্ন আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় অসময়ে শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়।

এসময় তারা অক্ষেপ করে আরো বলেন, বালু উত্তোলন এখনও চলছে। এতে করে শুধু বাধ নয় আরো অনেক ধরণের অসুবিধা হতে পারে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ বলেন, কোন ভাবেই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এটা বন্ধ করা জরুরি। তা না হলে নতুন করে নতুন কোন স্থানে শহর রক্ষা বাঁধের ভাঙন শুরু হতে পারে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে নদী কেটে বালু উত্তোলন করায় নদীর গতি পরিবর্তিত হয়ে বাঁধে আঘাত হানলে বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়বে। তখন শহরবাসী হুমকির মুখে পড়বে। তাই আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

উন্নয়ন সংস্থা দেশগ্রামের নির্বাহী পরিচালক এবিএম বজলুর রহমান খান বলেন, যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করলে বাঁধ বা নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়ার আশংকা থাকবেনা। সেই স্থান চিহ্নিত করে সেখান থেকেই বালু উত্তোলনের অনুমতির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে মাদারীপুরবাসী শংকামুক্ত হবে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যতদ্রুত সম্ভব বাঁধের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

(এএসএ/এএস/এপ্রিল ০৭, ২০১৫)