নাটোর প্রতিনিধি : গ্রাম্য শালিসে জরিমানার লাখ টাকা না দেওয়ায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি গ্রামে একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। প্রতিবেশীদের সাথেও কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে ওই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরুষ সদস্যরা গ্রাম প্রধানদের ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

ভুক্তভোগি পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, বাড়ির সীমানা নিয়ে হালতি গ্রামের মৃত মজির উদ্দিনের ছেলে কাউছার আলীর সাথে প্রতিবেশী বেলাল, ফলেন ও রশিদের সাথে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধ নিস্পতি করতে গত ২৭ ফেব্র“য়ারী গ্রামে একটি শালিসী বৈঠক বসে। ১১ সদস্য গ্রাম প্রধানদের একটি প্রতিনিধি দল একমত হয়ে কাউছার আলীকে এক লাখ টাকার জরিমানা ধার্য করেন এবং এক মাসের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে সময় বেধে দেয়। কিন্তু কাউছার আলী ওই জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম জোয়ার্দ্দরের কাছে পুনরায় শালিসী বৈঠকের জন্য আবেদন জানান। এতে গ্রাম প্রধানরা ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে কাউছারের বাড়ির চারধারে এবং প্রধান গেটের সামনে বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরি করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। একই সাথে ওই পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা না বলার জন্য প্রতিবেশীদেও হুঁশিয়ারী করে ঘোষণা দেয় গ্রাম প্রধানরা। কেউ কথা বললে তাকেও এক ঘরে করে রাখা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

কাউছার আলীর স্ত্রী নাজনিন আক্তার লাভলি অভিযোগ করে জানান, জরিমানার টাকা না দেওয়ায় তাদের বাড়ির সামনে গ্রাম প্রধানদের নির্দেশে প্রতিবেশী বেলাল, রশিদ ও ফলেন বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। প্রতিবেশীদেও সাথেও কথা বলতে দিচ্ছে না। একঘরে হওয়ার ভয়ে প্রতিবেশীরাও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের হুমকির মুখে স্বামী কাউছার বাড়িতে আসতে পারছেন না।

প্রতিবেশী শাহিদা খাতুন জানান, ওই পরিবারের কারো সাথে কথা বলতে গেলেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কথা বললে তাদেরও জরিমানা করা হবে বলে শাসানো হচ্ছে। এলাকার দোকান থেকেও জিনিসপত্র কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার সারা দিন ধরে তারা অনাহারে দিন কাটিয়েছে।

প্রতিবেশী এনামুল হক লাদু জানান, প্রতিবেশীদের সাথে বাড়ির সীমানা নিয়ে কাওছারের গোলযোগ সৃষ্টি হয়। পরে কাউছার জায়গা বুঝে দিলেও গ্রাম প্রধানরা অন্যায়ভাবে এক লাখ টাকার জরিমানা করে। টাকা না দেওয়ায় বাড়ি থেকে তাদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। কাউছারের পরিবারকে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে।

কাওছার আলী জানান, বাড়ি করার সময় গ্রাম প্রধানরা জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পরও অন্যের জমির ওপর ঘর তোলার অভিযোগ এনে তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রধান গেটের সামনে বেরা দিয়ে তাকে সহ পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত দু’দিন ধরে। প্রাননাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে তাকে। এব্যাপারে থানায় অভিযোগ করার পরও তিনি প্রাণ ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না।

এদিকে গ্রাম প্রধান মোহাম্মদ আলী ও জাহিদুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কাউছারকে কোন জরিমানা করা হয়নি। দির্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে জায়গা-জমির দাম নির্ধারণ করা সমুদয় অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। কাউছার আলী শালিসী বৈঠকের সিদ্ধান্ত মেনে নিজেই এক মাসের সময় নিয়ে এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা দেয়নি সে। এবিষয়ে বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও কোন সাড়া দেয় না। সোমবার রাতে শালিসদার এবং গ্রামবাসীকে বিষয়টি অবহিত করার পর বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, কাউছার আলী নিজেই জনসাধারনের চলাচলের রাস্তা দখল করে দালান ঘর নির্মাণ করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। কাউছারকে অবরুদ্ধ করার কথা সঠিক নয়।

নলডাঙ্গা থানার ওসি নাসির উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ কওে দেওয়া আইন সংগত হয়নি। এধরনের কোন বিধান নেই। এব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। বিষয়টি খোজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমআর/এএস/এপ্রিল ০৭, ২০১৫)