ঢাবি প্রতিনিধি : বাকি মাত্র ৬ দিন। এর পরই আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের এই উৎসবকে বরণ করে নিতে সারাদেশেই চলছে নানা প্রস্তুতি। দেশের আনাচে কানাচে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা আর বৈশাখী মেলার আয়োজন।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য আর গ্রামবাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে নববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিল্পীরাও।

নববর্ষ উদযাপনকে ঘিরে তাদের যেন চোখে ঘুম নেই। প্রতিবছরের মত এবারও পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। আর এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ। তাই শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে চারুকলায় এখন সাজ সাজ রব।

তুলির আঁচড়ে নতুন রং। রং বেরংয়ের বাঘ, ময়ূর আর মাছেরা হাঁটবে মঙ্গল শোভাযাত্রায়। চারুকলা অনুষদে চলছে তাই রংয়ের শেষ ছোঁয়াটুকু। লাল, নীল তুলির আচঁড়ে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলার নানা ঐতিহ্যবাহী লোকজ কাঠামো। মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য-‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’।

মঙ্গল শোভাযাত্রা সার্থক করে তুলতে পুরো চারুকলা জুড়েই চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি আর মহড়া। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দিন-রাত কাজ করে চলেছে।

চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শ’খানেক শিক্ষার্থী। আঁকছেন নানা রং বেরংয়ের ছবি। শিক্ষার্থীরা যার যার ওপর অর্পিত কাজ নিয়ে পুরোদমে ব্যস্ত। কেউ ছবি আঁকছেন, কেউ মুখোশ গড়ছেন, কেউবা আবার হাঁড়ি-পাতিলের ওপর কারুকার্য তৈরি করছেন। সেগুলোই কিছুক্ষণ পর টাঙানো হচ্ছে দেয়ালে।

চমৎকার এসব শিল্পকর্ম অপরূপ সৌন্দর্য্যে সাজিয়ে তুলেছে পুরো চারুকলা প্রাঙ্গণকে। শিক্ষার্থীরা এসব তৈরি করছেন মূলত বিক্রির জন্য। আর এসব বিক্রির টাকা দিয়েই তৈরি হচ্ছে পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশাল বিশাল প্রতিকৃতি।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, “আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য কোন স্পন্সর নিই না। তাই আমাদের তৈরি জিনিসগুলো বিক্রি করেই আমাদের উৎসবকে সাজানো হবে। আশা করছি আমরা সফলভাবে উৎসব আয়োজন সম্পন্ন করতে পারবো।”

উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সাদিয়া জাহান বলেন, “অনেকগুলো মুখোশ বানিয়েছি আমরা। এর মধ্যে আছে বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ এবং খরগোশের মুখোশ। নানা রংয়ের মুখ ও মুখোশ দিয়ে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বর্ণিল করে তুলবো। সমৃদ্ধ এবং বর্ণময় বাংলাদেশকে আমরা শোভাযাত্রার মাধ্যমে তুলে ধরবো।”

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার আলি বলেন, “প্রতিবছরের মত এ বছরও আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছি। আশা করছি সুন্দরভাবেই এ অনুষ্ঠান শেষ করতে পারব।”

নতুন কোন চমক আছে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিসার আলি বলেন, “আমাদের এবারের স্লোগান ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’। আমি মনে করি বর্তমান কুসংস্কারে ছেয়ে যাওয়া সমাজ ব্যবস্থার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চমক।”

প্রতিনিয়ত বৈশাখ আসবে-যাবে। বৈশাখের রং ছড়াবে সমগ্র বাঙালির হৃদয়ে। এই রংয়েই ধুয়ে-মুছে যাবে যত গ্লানি আর মনের অন্ধকার। অনেক আলো জ্বলবে মনের অন্ধকারে- এটাই মঙ্গল শোভাযাত্রার আহ্বান।