বিনোদন ডেস্ক : ৯ মে টাঙ্গাইলের দুটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে কলকাতার অঙ্কুশ ও শুভশ্রী অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়'। কোন প্রচারণা না করে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে নিরবেই মুক্তি দেয়া হয়েছে ‘যৌথ প্রযোজনা’র এই সিনেমাটি।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সিনেমাটি ১৬ মে ভারত–বাংলাদেশে একযোগে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একই দিনে ভারতের আরেকটি সিনেমা 'যুদ্ধশিশু' এ দেশে মুক্তি দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি সূত্রে জানা যায় ঐদিন আর কোন চলচ্চিত্র মুক্তি না দিতে প্রযোজনা সংস্থাগুলোকে অনানুষ্ঠানিক নিষেধ করেছে তথ্যমন্ত্রণালয়।

আর তাই দুই বাংলায় একইদিনে 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' সিনেমা টি মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে লুকোচুরির কৌশল নিয়েছে সিনেমাটির বাংলাদেশি প্রযোজনা সংস্থা অ্যাকশন কাট। কাগজপত্রে প্রশাসনকে সিনেমা মুক্তির তারিখ ৯ মে দেখানোর জন্য টাঙ্গাইলের ‘কেয়া’ এবং ‘কল্লোল’ সিনেমা হলে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এতে করে ১৬ মে ব্যাপকহারে সিনেমাটি মুক্তি দিতে কোনো বাঁধা থাকবে না। ইতিমধ্যে ঐদিন সারাদেশের ৯০টি সিনেমা হলে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আবার ১৫ মে সিনেমাটির প্রিমিয়ারেরও আয়োজন করা হয়েছে ঢাকায়।

এদিকে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ সিনেমাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক সমালোচনা চলছে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হিসেবে প্রচার হলেও এটি মূলত টালিউডের সিনেমা বলে মনে করছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সাঁটানো সিনেমার পোস্টারে পরিচালক হিসেবে কলকাতার অশোক পতি এবং বাংলাদেশের অনন্য মামুনের নাম রয়েছে। তবে কলকাতা থেকে প্রচারিত ও প্রকাশিত ট্রেইলার, গান ও পোস্টারে অনন্য মামুনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

ট্রেলরে আছে পরিচালনায় অশোক পতি এবং সহ পরিচালনায় অনন্য মামুন। আর যে পোস্টার করা হয়েছে সেখানে মামুনের নামই নেই।

এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে প্রযোজনা সংস্থার নামও। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের অ্যাকশন কাট এবং কলকাতার এসকে মুভিজ। এরমধ্যে অ্যাকশন কাট প্রযোজনা সংস্থার মালিক নির্মাতা অনন্য মামুন।

দুটি দেশের যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় সাধারণত অভিনেতা-অভিনেত্রীর সমানসংখ্যায় রাখা হয়। কিন্তু এখানেও হাতেগোনা মিশা সওদাগর ও ডন ছাড়া নেই আর তেমন কোন বাংলাদেশি শিল্পী। আড়াই মিনিটের ট্রেইলরেও তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে মাত্র চার-পাঁচ সেকেন্ড।

কলকাতায় সিনেমাটির প্রমোশনে তো বটেই, স্বয়ং অংশীদারি প্রযোজনা সংস্থা এসকে মুভিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যৌথ প্রযোজনা এবং বাংলাদেশি পরিচালকের নাম।

এর প্রেক্ষিতে এটি আদৌ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নাকি ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে উন্মুক্ত করে দেয়ার একটি পদক্ষেপ- এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মূলত একটি ভারতীয় সিনেমাকে বাংলাদেশে বৈধতা দেওয়ার লক্ষ্যেই সিনেমাটির বাংলাদেশি পোস্টারে অনন্য মামুনের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।

সার্বিক বিষয়ে জানতে নির্মাতা অনন্য মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ১৬ মে সিনেমা মুক্তি দেয়ার কথা বলেও কেন এক সপ্তাহ আগে সিনেমা মুক্তি দেওয়া হল এ বিষয়ে হাস্যকর এক যুক্তি দিয়েছেন মামুন। তিনি বলেন, “সেন্সর বোর্ড বলে দিয়েছে ১৬ তারিখে যুদ্ধশিশু ছাড়া অন্য কোন সিনেমা মুক্তি দেয়া যাবে না। এখন কলকাতায় আগে মুক্তি পেয়ে গেলে এখানে যদি পাইরেসি হয়, তার দায়ভার কে নেবে ”

সিনেমার প্রচার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, এবং নাম প্রকাশে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মামুন বলেন, ‘একটা ভালো সিনেমা করলাম, এইটা নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন? বিভিন্ন জায়গা থেকেও এই সিনেমা মুক্তি দিতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। আগেও তো যৌথ প্রযোজনা’র সিনেমা হয়েছে। কই তখন তো কথা ওঠেনি।”

(ওএস/এটি/মে ১৩, ২০১৪)