পাথরঘাটায় সাত কোটি টাকা নিয়ে এনজিও মালিক লাপাত্তা
বরগুনা প্রতিনিধি :বরগুনার পাথরঘাটায় সোনালী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) মালিক ও নির্বাহী পরিচালক সামসুদ্দিন আজাদ ওরফে নয়া মিয়া ৯ হাজার গ্রাহকের ৭ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৫ মার্চ থেকে এনজিওটি বন্ধ রয়েছে। এনজিওর মালিকসহ কর্মকর্তাদের নামে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা বরাবরে একাধীক অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন গ্রহকরা। এর পর থেকে এনজিওর মাঠ কর্মীরাও পলাতক রয়েছেন। এতে করে কয়েক হাজার দরিদ্র পরিবার তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন।
জানাগেছে, পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের কুপধন গ্রামের মরহুম মহফিজ উদ্দিনের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা নয়া মিয়া ২০০১ সালে পাথরঘাটা থানার পশ্চিম পাশে ১০ শতাংশ জমি কিনে একটি আবাসিক হোটেল নির্মান করেন। বছর খানিক হোটেলটি চালানোর পর হোটেল ব্যাবসায় ব্যাপক লোকসান হয়। পরে এলাকার কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে একটি মাল্টিপারপাস ব্যাবসা চালু করে সোনালী ফাউন্ডেশন নামে এনজিও হিসাবে বিভিন্ন প্রগ্রাম (কর্মকান্ড) চালু করেন। প্রগ্রামের মধ্যে এফডি ও ডিপিএস এ অনেক গ্রাহক তৈরী হয়। ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী দ্বিগুন লাভের আশায় ২২শ ১৩ জনে টাকা জমা দিয়ে এনজিও সদস্য পদ লাভ করেন। পরে এসব সদস্যদের যথা সময় দ্বিগুন লাভসহ টাকা ফেরত দিয়ে লোকজনের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনে। দ্বিতীয়বারে এস ডিপিএস ও এফডি প্রোগ্রামে ৯ হাজার গ্রাহক তৈরী হয়। এতে করে প্রত্যেক গ্রাহক এফডিতে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা করে সঞ্চয় জমা করেন।
পাথরঘাটা উপজেলার মুন্সিরহাট গ্রামের আনিচুর রহমান, ছালেহা বেগম, বিজয়া রানী, মাধবী রানী,কাকলী রানী, মোস্তফা,খোকন,দুলাল, ফরাজীসহ অনেক গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সোনালী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামের ওই সংস্থাটি ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদী ১শ টাকা থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস (সঞ্চয়ী আমানত)এবং একই সাথে দ্বিগুন লাভের আশায় ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদে এফডি করেছে কয়েক হাজার মানুষ। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টাকা ওঠান মাঠ কর্মীরা। পরে মেয়াদ শেষ হলে অনেকে টাকা তুলতে গিয়ে বিরম্বনার স্বীকার হয়। এসময় অনেকের মনে সন্দেহ জাগে। পরে গত ২ এপ্রিল এনজিওর সহকারী পরিচালক লক্ষী কান্ত দাস তার কালমেঘা গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে পালাবার চেষ্টা করলে গ্রাহকরা খবর পেয়ে তাকে ধরে থানায় সোপার্দ করে। এসময় সোনালী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য স্থানী আ’লীগ নেতারা তাকে ছাড়িয়ে আনলে এনজিওর দেউলিয়ার বিষয়টি ধরা পরে।
সোনালী ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপার ভাইজার উষা রানী জানান, তার হিসাব অনুযায়ী ৯ হাজার গ্রাহকের ৭ কোটি টাকা নিয়ে এনজিও মালিক নয়া মিয়া গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা মাঠে সঞ্চয় উঠিয়েছে তারা এখন তোপের মুখে পরেছে। তাদের অফিসের দেড়শ মাঠকর্মী গ্রাহকের সঞ্চয়ী টাকা ফেরৎ দিতে না পারায় সবাই পালিয়ে বেড়াছে। এবং প্রত্যেকের নামে থানা এবং ইউএনওর বরাবরে দরখস্ত হয়েচ্ছে। তিনি নিজেও গা ঢাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
পাথরঘাটা থানার ওসি জিএম শাহনেওয়াজ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সংসদ সদস্য মহোদয় এলাকায় আসলে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার আগে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের সাথে ফয়সালা করে তা হলেতো ভাল। নাইলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ শাখাওয়াত হোসেন সরকার সাংবাদিকদের কাছে বলেন, বিষয়টি আমরা যথাযথভাবে দেখব। এব্যাপারে সোনালী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নয়া মিয়ার সাথে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করতে (০১৯২০৭৬২৬২০)চাইলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
(এমএইচ/এসসি/এপ্রিল১০,২০১৫)