শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুর জেলার সর্বত্র বিশেষ করে জেলা শহর এবং কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি বাজিতখিলা এলাকার মানুষের চোখ এখন টিভি পর্দায়। সকলের মাঝে উৎকন্ঠা, কখন ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে। নাকি আদৌ ফাঁসি হচ্ছে না, সে কি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন, নাকি রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করবে না।

এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্য দিয়ে শেরপুবাসী সময় পার করছে। ফুটপাতের টং দোকানের চায়ের কাপ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, দিনমজুর, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীদের মাঝেও একই কৌতুহলী প্রশ্ন-কামারুজ্জামানের কখন ফাঁসি হচ্ছে। নাকি আসলেই ফাঁসি হচ্ছে না।

শুক্রবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও কমিউনিটি পুলিশ সমাবেশে বক্তব্য দানকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস.এম.নূরুল ইসলাম হিরু বলেন, আমরা উৎকন্ঠায় আছি, কেন কামারুজ্জামানের ফাঁসি এখনও কার্যকর হচ্ছেনা। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, জানিনা, কোন অদৃশ্য সুতার টানে তার ফাঁসি আটকে আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর পরবর্তি কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে শেরপুরের জেলা প্রশাসন। কামারুজ্জামানের পরিবারেও রয়েছে প্রস্তুতি। শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হেসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারজ্জামানের মৃত্যুদন্ডের সাজা কার্যকরের যে বিষয়টি আছে তাতে কোন অবস্থাতেই যেন আইন-শৃংখলার কোন অবনতি ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে। পার্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব এবং দুই প্লাটুন বিজিবিও টহল দিচ্ছে।

এছাড়া নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার রাখতে ‘জেলা কোর কমিটি’ এবং আইনশৃংখলা কমিটি’র সভা করা হয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে অবগত করার পাশপাশি স্থানীয় মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, হুইপ আতিউর রহমান আতিক এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে জেলার সার্বিক আইনশৃংখলা রাক্ষায় সদা প্রস্তুত রয়েছি। এদিকে, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম জানান, কামারুজ্জামানের ফাঁসি পরবর্তি কার্যক্রমের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করা যাবে না।

এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরে দাফন যাতে না হয় সে ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে নির্দেশ এসেছে এরকম এক খবরে তোলপাড় চলছে শেরপুরের সর্বমহলে। কিন্তু এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন জানান, এ ধরনের কোন চিঠি, নির্দেশ বা আদেশ আমরা কেউ পাইনি। তবে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের স্মারকলিপি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

তবে কামারুজ্জামানের ভাই কফিল উদ্দিন জানান, কামারজ্জামানের ইচ্ছা ছিল তার মৃত্যুর পর লাশ শেরপুরে তার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার পাশে যেন দাফন করা হয়। সেই মোতাবেক লাশ দাফনের জন্য পারিবারিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজিতখিলা-কুমরি এতিমখানার পাশে কবরস্থান তৈরী করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের পর তার লাশ আমাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও সুষ্টভাবে দাফনের জন্য পরিবারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোন উত্তর পাইনি। এসব নানা ঘটনা ও জল্পনা-কল্পনার মধ্যে শেরপুরবাসী এখন উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

(এইচবি/এএস/এপ্রিল ১০, ২০১৫)