বান্দরবান প্রতিনিধি : পাহাড় কন্যা বান্দরবানে ৪ দিন ব্যাপি আয়োজিত মারমা সম্প্রদায়ের মাহাসাংগ্রাই পোয়ে উৎসব বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে। সোমবার সকালে মাহাসাংগ্রাই পোয়ে উৎসবের প্রথম ইভেন্ট বর্ণাঢ্য র‌্যালীর উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।

আয়োজিত সাংগ্রাই র‌্যালীতে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতীরা তাদের নিজস্ব স্বত্তার ব্যানার, ফেষ্টুন ও প্লেকার্ড নিয়ে অংশ নেয়। বাংলা নববর্ষের পাশাপাশি মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষপঞ্জি হিসেবে আজ থেকে তাদের নব বর্ষের সুচনা। তাদের বর্ষপঞ্জি হিসেবে ১৩৭৫ (সাক্রয়) সালকে বিদায় জানিয়ে ১৩৭৬ (সাক্রয়) সালকে বরণ করে নিচ্ছেন। মারমাদের পাশাপাশি তংচংঙ্গ্যা সম্প্রদায়ও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করছে। রেইচা সিনিয়র পাড়ায় তাদের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার ২৪টি দলের প্রায় ৩ শতাধিক যুবক-যুবতী ও নারী-পুরুষ অংশ নিয়েছে।
বিদায়ের ঘনঘটায় সকল গ্লানী মুছে দিতে মারমা সম্প্রদায় মঙ্গলবার তাদের বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের মূর্তি উন্মেচন করাবেন। চন্দন কাঠের পানি বা দুধ দিয়ে বুদ্ধের মুর্তি গুলো ধুয়ে মুছে পরিস্কার করবেন। মুর্তি ধোয়া পানি গুলো পবিত্রতার প্রতীক মনে করে সেই পানি যুবক-যুবতীরা যত্ন সহকারে ঘরে নিয়ে এসে পান করেন। ঐদিন রাতে সারারাত ধরে যুবক-যুবতীরা দলবদ্ধ হয়ে পিঠা তৈরী করে তা ভোরে ভিক্ষুদের সম্পাদন করে থাকেন। একইদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে হাজার বাতি প্রজ্জলন অনুষ্ঠান এবং ধমীয় দেশনা রয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় ১৫ ও ১৬ এপ্রিল পুরাতন রাজার মাঠে মৈত্রী পানি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এতে পুরো জেলা সদরের বিভিন্ন পাড়ার ২০টি দল অংশ নিচ্ছে। অতীতের সকল জরা-গ্লানী, দঃখ কষ্ট মুছে দিতে মহাসমারোহে পালন করা হয় যুবক-যুবতীদের ঐতিহাসিক মৈত্রী পানি বর্ষণের এই মহাউৎসব। মারমা সম্প্রদায়ের এই মৈত্রীময় পানি বর্ষন উৎসব দেখার জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে রাজার মাঠে। এ সময় একদিকে যুবক-যুবতীদের পানি বর্ষন অন্যদিকে নানা ধরনের বিনোদন মুলক খেলাধুলা পরিবেশিত হয়। পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত চলে পাহাড়ী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মারমা ছাড়াও পাহাড়ে চাকমা, তংচংঙ্গ্যা, ত্রিপুরা সম্প্রদায় নিজস্ব স্বকীয়তায় তাদের আদি ঐতিহ্য ধারণ করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

(এফবি/পিবি/ এপ্রিল ১৩,২০১৫)