বরিশাল প্রতিনিধি : দুঃখ আর গ্লানি দূর করতে বাঙালীর জীবনে আনন্দের ছোঁয়া নিয়ে আসে পহেলা বৈশাখ। সারাদেশের বিভিন্ন স্থানের মত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সবখানেই এখন ব্যস্ততা পহেলা বৈশাখকে বরণ করতে। এজন্য চলছে শেষ প্রস্তুতি।

গ্রামীণ জনপদে বৈশাখ মাসে বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শীতলা ও কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর এ উপলক্ষে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে বৈশাখী মেলা হলো অন্যতম। বৈশাখী মেলার মূল আকর্ষণই হচ্ছে মাটির তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র। এ মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করার জন্য গত এক মাস ধরে ব্যস্ত রয়েছেন এলাকার পাল পারার মৃৎশিল্পীরা। বাহারী ও হরেক রকম ডিজাইনের ছোট-বড় খেলনা তৈরি করা হয়েছে মেলায় বিক্রির জন্য। পহেলা বৈশাখ থেকে পুরো মাস চলবে এ ব্যবসা। সরেজমিন কথা হয় আগৈলঝাড়া উপজেলার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের তরণী পাল, জয়দেব পাল, গৌতম পাল, মহাদেব ও রানী পালের সাথে। তারা প্রত্যেকেই মেলার জন্য বিভিন্ন ধরণের খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরি করছেন। খেলনার পাশাপাশি তারা মাটির হাঁড়ি-পাতিল কলসিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে থাকেন। খেলনার মধ্যে রয়েছে মাটির হাঁড়ি-পাতিল, রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল, বঙ্গবন্ধু, গণেশ পাগল, মা সারদাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, পুতুল, মযূর, হাতি, ঘোড়া, বানর, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁস, মুরগির ডিম ইত্যাদি। ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, তাল ইত্যাদি। তারা জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাই আমরাও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টায় আছি। সারা বছরই আমরা মাটির জিনিষ তৈরি করি। সিরামিক, প্লাস্টিক ও ধাতব তৈজসপত্রের জন্য আমাদের শিল্পে অনেকটাই ধ্বস নেমেছে। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবুও আমরা গুটিকয়েক পাল পরিবার পুরানো পেশা আঁকড়ে আছি। যখন কোন মেলা বসে তখন আমরা মেলার জন্যও খেলনা তৈরি করি। এটা আমাদের উপরি আয়। তবে আগের মত মানুষের চাহিদা না থাকায় বিক্রি ভালো হয়না। কুমারপাড়ায় চৈত্র মাসে চলে মাটির খেলনা ও তৈজসপত্র তৈরীর কাজ। বৈশাখ মাস জুড়ে বিভিন্ন মেলায় চলে বিক্রি। এসব মাটির খেলনার দাম ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। পালপাড়ার তারক চন্দ্র পাল বলেন, আমাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য নেই। মানুষের প্রয়োজন মেটাতে আমরা তাদের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছি। এ পেশা ছেড়ে অনেকেই ভিন্ন পেশায় নেমেছে। আমরা কয়েকটি পরিবার এখনও এ পেশা ছাড়তে পারিনি।

(টিবি/পিবি/ এপ্রিল ১৩,২০১৫)