কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : গলায় গেঞ্জি পেঁচানো, দুই হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা। গায়ে কাঁদা-মাটি মাখা ও পরনের সালোয়ার কামিজের বিভিন্ন অংশ ছেঁড়া। নিজ বাসা থেবে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তরমুজ ক্ষেতে এভাবে গৃহবধূ তানিয়া বেগমকে (২২) অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠে কৃষকরা।

তাদের ডাকচিৎকারে স্থানীয় শতশত মানুষ জড়ো হয়। কিন্তু সে জীবিত না মৃত এ আতংকে কেউ তার কাছে যেতে সাহস পায়নি। খবর দেয়া হয় কলাপাড়া থানায়। তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূকে অচেতন মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের উত্তর মাছুয়াখালী (পাটুয়া) গ্রামে শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনা শুনেই প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন।

গৃহবধূ তানিয়ার স্বামী ইলিয়াশ মৃধার দাবি,শুক্রবার রাতে তারা চার বছরের শিশু রবিউলকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত তিনটার ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে দেখেন তানিয়া বিছানায় নেই। এরপর শ্বশুড় বাড়িসহ (গলাচিপা উপজেলার গোলখালী গ্রামে) বিভিন্ন স্থানে তাকে খুঁজেছেন বলে থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের জানান। অথচ তানিয়া নিখোঁজের সংবাদ প্রতিবেশীরা কেউ জানেন না। তানিয়ার স্বামী এ ঘটনার জন্য একই গ্রামের কবির মৃধা ও আউয়াল মিয়াকে দায়ী করেন। তবে কখন কিভাবে গৃহবধূকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে তা জানাতে পারেন নি।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভর্তি হওয়ার চার ঘন্টায়ও জ্ঞান ফিরেনি তানিয়ার। ডাক্তাররা তার শুশ্র“য়ায় এগিয়ে আসলে চিৎকার করে বলছে আমারে আর মাইরেন না। কিন্তু কি ঘটেছিলো ঘটনার রাতে তা জানাতে পারছে না গৃহবধূর স্বজনরা। পুলিশ প্রহরায় তার চিকিৎসা চলছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনসার গাজী জানান, তানিয়াকে এরআগেও একাধিকবার স্বামী ও ননদ নির্যাতন করেছে। কিন্তু এবার তাকে এভাবে মারধর করে তরমুজ ক্ষেতে ফেলে রাখার কারন বুঝতে পারছেন না। ঘটনাস্থল থেকে ওই গৃহবধূর বাড়ি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। তিনি স্থানীয় মাটি কাটা শ্রমিক জামাল হোসেনের বরাত দিয়ে দিয়ে জানান, ফজরের নামাজের সময় তানিয়ার স্বামী ইলিয়াশ মৃধাকে ওই স্থান থেকে যেতে দেখেছেন। তখন তার পায়ে কাঁদা লেগেছিলো।

তানিয়ার চাচী নিলুফা বেগম জানান, প্রায়ই তাকে নির্যাতন করা হতো। এই নিয়ে দুই মাস আগে একটি মামলাও হয়। পরবর্তীতে তাকে আর নির্যাতন করা হবেনা এই শর্তে মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, তানিয়াকে যে দড়ি দিয়ে দুইহাত বাঁধা ছিলো তা গার্মেন্টস’র কাপড়ের গাইড বাঁধতে ব্যবহার হয়। তানিয়ার ননদ কাকলী গার্মেন্টসে কাজ করতো। আর ঘটনাস্থল থেকে যে জুতা ও গেঞ্জি উদ্ধার করা হয়েছে তা তার স্বামীর।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, তাদের ধারণা গৃহবধূকে হত্যার জন্যই ওই বিলের মধ্যে নেয়া হয়েছিলো। ঘাতকরা তাকে মৃত ভেবে ওভাবে ফেলে রেখে গেছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা.জেএইচখান লেলীন জানান, তানিয়ার দুই হাত ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের কারনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে বলে তারা ধারনা করছেন। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে। বর্তমানে তাকে সুস্থ্য করার জন্য তারা সব ধরনের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।

কলাপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, কারা কি কারণে তানিয়াকে হাত বেঁধে তরমুজ ক্ষেতে ফেলে রেখেছে গোটা বিষয়টিই তারা তদন্ত করে দেখছেন। তবে তানিয়ার জ্ঞান ফিরলে গোটা ঘটনাটি জানা যাবে।

(এমকেআর/এএস/এপ্রিল ১৮, ২০১৫)