শ্রমঘন সন্ধার গান



আমার এ আহ্বান কালের চাকায় ঘোরা
জ্বালাময়ী আগুন
রক্তে ঘামে মিশে আছে শরীরের ধূসর ডানায়,
যে আগুন সভ্যতাকে টেনে তুলেছে বার বার
সংঘাতময় পৃথিবীর ইতিহাস খুঁড়ে।

আমার এ আহ্বান অনন্ত সমৃদ্ধির
উজ্জীবিত স্লোগান
কালের পথ মাড়াতে মাড়াতে তীর খুঁজে পেয়ে
আলোর সংকেতে উঠে আসা রক্তনদী।

ঐ দেখ দূরে জ্বলছে দুর্বিনীত আলোকশিখা
সফলতা ছুটছে শ্রমিকের দাঁড় বেয়ে,
এই কৃতিত্ব নিয়ে এগিয়েছ শতাব্দী, এগিয়েছে সব
শুধু ফেরেনি দিনবদলের কারিগরের ভাগ্য, তাই
আর নয় অনিয়মের চাবুক কিংবা শ্রমঘন সন্ধার গান
আজ অধিকার হোক বৈষম্যহীনতার, ন্যায্যতার।


সেলফি

জীবন-ফ্রেমের কিছু সময় মুখোমুখি দুজন। সামনে আধুনিক বিজ্ঞানবিশ্বের হাতছানি, ফাইভ ডাইমেনশনের ভৌতিক ছলনা। দুর্বল করেনি আমাকে কারণ, ভরসা ছিলে তুমি! আগলে রেখেছিলে নিজের থেকেও অনেক বেশি। কোটি নক্ষত্রের ভিড়ে তোমার উষ্ণতায় অশান্ত হৃদস্পন্দন, ভুলে গিয়েছিলাম নীহারিকার অগ্নিস্তূপে আমার জন্মসত্য, আর গোলক বিশ্বের ঘূর্ণমান গ্রহ-উপগ্রহের দিকে ছুটছিলাম তোমাকে নিয়ে। যেন তৃষ্ণার্ত শালিখের মতো সঞ্চিত জলে পিপাসা মেটানোর দায়। তবু দুজনের মাঝে জেগে ছিল অদৃশ্য দেয়ালের অনুভূতি, হতে পারে প্রকৃত ভালবাসা সেখানেই নিহিত!


২৭ নম্বর বাস

অজানার গভীরে আটকে প্রতিনিয়ত ভাবছি
শুরু আর শেষ, আড়ষ্টতা আমাকে আটকে রাখেনি
তাই আগ্রহভরে, ২৭ নম্বর বাসের যাত্রী...

জানি পরিচিত, তবু একান্ত সান্নিধ্যের প্রত্যাশা
মনের ক্যানভাসে আঁকা জল-ছবির নিবিড় টান
অথচ আমি ছিলাম অস্পষ্ট, আরÑ
ও-পাশে অপেক্ষারত গভীর আমন্ত্রণ...

এইভাবে একদিন, সারাদিন কাছাকাছি তার
অবশেষে নগরীর সন্ধ্যায় বিচ্ছেদের বাঁশি
যেন এক চিলতে স্বপ্নের অবসান,
যেন পুনরায় একীভূত হওয়ার প্রতীক্ষা!



স্মৃতির আশ্রয়

আমি হারাতে চাই না অন্য পৃথিবীর স্বর্ণ-শিখরে।
কেবলি যাত্রী হতে চাই নিজস্বতার
কিন্তু’র পাখায় ঘুঙুর বেঁধে কামিনীর সুবাস বিলাতে।
ওই দেখো প্রবহমান জলধারায় পিপাসা মিঠাতে
ছুটছে তৃষ্ণার্ত পাখি, আর আমি
দহনবীণার সূর গচ্ছিত রেখেছি মৌন জলে
যেখানে আকাক্সক্ষার পরীরা গভীর নিমগ্নতায়
শিল্প খুঁজে ফেরে।
আজ ধানশালিক নয়, নয় কোনও পরদেশি ভূমি
তোমার কেশরে গেঁথে দিলাম সঞ্চিত আত্মকথা।