স্পোর্টস ডেস্ক, ঢাকা : যেটা আবাহনী পাঁচবারের অভিযানেও পারেনি, সেটা প্রথমবারেই করে দেখিয়েছে শেখ রাসেল! প্রথম বাংলাদেশি ক্লাব হিসেবে পৌঁছেছে এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপের মূল পর্বে। এখানেই তারা অনন্য। ঘরোয়া ফুটবলে বাজে পারফরম্যান্সের পর ঠিকই তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে কলম্বোর সুগাথাদাসা স্টেডিয়ামে। আশা-নিরাশার দোলাচল উড়িয়ে দিয়ে শেখ রাসেল ফিরেছে এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপের মূল পর্বের টিকিট নিয়ে। ফুলেল সম্ভাষণে তাদের আলিঙ্গন করেছে ফেডারেশন এবং ফুটবল-সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় দল হলে হয়তো ফেরার সময় বিপ্লব ভট্টাচার্যদের মাথা আরো উঁচুতে থাকত গর্বে। তবে এ ক্লাব সাফল্যও তো কম নয়।

ফেরার দিনটি এমন উৎসবমুখর হবে, অর্জনের সুরভি ছড়াবে, বাজি ধরে বলা যায় যে কোচ দ্রাগান দুকানোভিচ ভাবেননি। কল্পনাকে ছাড়িয়ে যাওয়া প্রাপ্তির আনন্দের তীব্রতাও তাই স্পষ্ট কোচের চেহারায়। কণ্ঠেও সে কি আত্মবিশ্বাস, ‘শ্রীলঙ্কা রওনা হওয়ার আগে সবার মধ্যে একটা কৌতূহল ছিল আমাদের ফল নিয়ে। আমরা কেমন খেলব, সেটাই ছিল আলোচনা। আমরা কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। যা হয়েছে তা শুধুই শেখ রাসেলের নয়, দেশের সবাই গর্বিত। বাংলাদেশের কোনো ক্লাব প্রথমবারের মতো এ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে, এটা গর্বের ব্যাপার।’
ঢাকার মাঠের পারফরম্যান্স আশা জাগানিয়া ছিল না বলে সংগত কারণে দূরদেশে আরো খারাপের শঙ্কা ছিল। সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তারা দুই ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পৌঁছেছে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে। তিন ম্যাচে একটিও গোল হজম করতে হয়নি রাসেলকে। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার হাসান আল মামুনের ক্যারিয়ারেও এটা দুর্দান্ত ঘটনা,‘দল হিসেবে ভালো খেলার ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমরা ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। জীবনে অনেক ম্যাচ আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছি; কিন্তু এই প্রথম টুর্নামেন্টের কোনো ম্যাচে আমরা গোল খাইনি। এটা গোলরক্ষক বিপ্লব ও ডিফেন্ডারদের সাফল্য।’
প্রাক-টুর্নামেন্ট অঙ্কে গতবারের রানার্সআপ পাকিস্তানের খান ল্যাবরেটরিজ ছিল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, তাদের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ নিয়ে রাসেলের শঙ্কা ছিল। মনের ভয়ে তাঁরা এতটাই গুটিয়ে ছিলেন যে প্রথম ম্যাচে নিজেদের সেরা প্রদর্শনীটা করতে পারেননি কেউই। গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য মিলে সেদিনের প্রথম ধাক্কা কোনো রকমে সামলে ছিল ম্যাচ ড্র করে।

পরের ম্যাচ থেকেই শেখ রাসেল একেবারে অচেনা। যে দলটিতে কোনো স্ট্রাইকার নেই বলে কোচ হা-পিত্যেশ করেছিলেন, সেই দলটিই মেতে ওঠে গোলোৎসবে। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কান এয়ারফোর্সকে ৫-০ গোলে হারানোর পর শেষ ম্যাচে ভুটানের উগিয়েন একাডেমিকে হারিয়েছে ৪-০ গোলে। দুই ম্যাচে দুটি করে গোল করে মিঠুন চৌধুরী আনন্দে আত্মহারা, ‘আমি কী বলব, ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। প্রত্যেক খেলোয়াড় এবং ক্লাবের লক্ষ্য থাকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করার। আমাদের এ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে প্রতিপক্ষ মোটেও সহজ ছিল না। বিশেষ করে পাকিস্তানের দলটি আমাদের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে।’

(ওএস/পি/মে ১৪,২০১৪)