প্রান্ত সাহা : বার মাসে তেরো পার্বণ একটা প্রবাদই আছে। আর বাঙ্গালীদের তো একের পর এক উৎসব লেগেই থাকে সারা বছর। আর সেই উৎসবের তালিকায় দেশের নতুন কোচিং শিল্প। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই দলে দলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে এই কোচিং সেন্টারগুলোতে। ব্যাঙের ছাতার মতো ঢাকাসহ সারা দেশেকে যেন এক বিজ্ঞপ্তির চাদরে মোড়া হয়েছে। আর বিশেষ করে ঢাকায় সারাদেশ অংশ নেয় এ মহোৎসবে। এ যেন প্রতিবছরই এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। যার একটিমাত্র লক্ষ্য ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসনের অধিকার নিশ্চিত করা। যেখানে একটি পয়েন্ট ব্যবধানে হাজারো ছাত্র/ছাত্রী স্বপ্ন নিমজ্জিত হয় আর মুখথুবরে পড়ে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর মূল বই সম্পর্কে ধারণা থাকুক আর নাই থাকুক কোচিং এ ভর্তি হওয়া চাই ই চাই।

আর কোচিং সেন্টারের মালিকেরাও যেন পেতে বসেছে এক টাকা ধরার ফাঁদ যদিও তাদের মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের ভালো ফল অর্জনে সহায়তা করা। আর যেখানে ছাত্রের মূল বই সম্পর্কে ধারণা সামান্য সেখানে কোচিং সেন্টার তার জন্য কি বা করতে পারে। বড়জোর কোচিং সেন্টার শিক্ষার্থীর বাবা-মার সান্তনা পুরন করতে সক্ষম, ‘যে আমার সন্তান অমুক কোচিং এ পড়ে’ আশা করি এর বেশী কিছু নয়। একটি কোচিং সেন্টার কখনই মূল বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। আর তাই অনেক সময় যখন রাজধানী ঢাকা ঐতিহ্যবাহী যানজটে অচল, তখন দেখি বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের নানা রকমারি বিজ্ঞাপন! আর সেদিন দেখলাম লেখা, ‘মূল বই কখনই কোচিং সেন্টারের বিকল্প হতে পারে না’। এযেন সিগারেটের প্যাকেটের উপরে লেখা অমৃত বাণীর প্রতিচ্ছবি। যেখানে লেখা থাকে, ‘সিগারেট ক্যান্সারের ঝুকি বাঁড়ায়’। এরা গ্রাহককে সতর্ক করে ঠিকই কিন্তু উৎপাদন বন্ধ করতে নারাজ।

আর রাজধানীতে কোচিং শিল্পকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ছাত্র/ছাত্রী হোস্টেলের নামে এক রমরমা ব্যবসা। আর এই কোচিং শিল্প, হোস্টেল ব্যবসার অন্যতম স্থান বা ঘাঁটি রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট। যেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অনেক নামধারী কোচিং সেন্টার। তাই কারো একার উপর দোষ দিয়ে রেহাই পাওয়া সম্ভব না।

তাই শুধু কোচিং সেন্টারের দোষ দেব না, আপনি যদি আপনার সন্তানকে কোচিং সেন্টারে না পাঠান তবে কোচিং শিল্পও বিকশিত হবে না। তাই সবার উপরে লক্ষ্য রাখতে হবে সন্তানেরা যেন কখনই কোচিং সেন্টারকে মূল বইয়ের বিকল্প হিসাবে গ্রহণ না করে।


(পি/অ/মে ১৪,২০১৪)