স্টাফ রিপোর্টার : নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) বাংলা সাহিত্যাকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। তিনি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে সু-প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সাহিত্যের এ ধ্রুবতারার আদিপুরুষ ও আত্মীয়তা ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের খুলনাঞ্চলে।

রবীন্দ্রনাথের শ্বশুড়বাড়ি খুলনার দক্ষিণডিহি। এখানে এলে দেখবেন বাংলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ (বুক সমান) ভাষ্কর্য, কবিপত্নীর আবক্ষ ভাষ্কর্য, শ্বশুরবাড়ির দ্বিতল ভবন। এছাড়া রয়েছে সবুজ-শ্যামল ঘন বাগান, পান-বরজ ও নার্সারি। কিছু সময় হাতে নিয়ে ২৫ বৈশাখ বেড়িয়ে আসতে পারেন দক্ষিণডিহিতে।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কবির ১৫৪ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ২৫ বৈশাখ কবির স্মৃতিবিজরিত খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি ও রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসন ২৫ হতে ২৭ বৈশাখ তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

তিনদিনের এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যে কেউ ঘুরে যেতে পারেন নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগ। কেননা এই দক্ষিণডিহি গ্রামেই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ী। পিঠাভোগে রয়েছে কবিগুরুর পূর্ব পুরুষের নিবাস।

ইতিমধ্যে কবির স্মৃতিধন্য এ দুই স্থানকে কবি প্রেমীদের মিলন মেলা ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে।

যেভাবে যাবেন দক্ষিণডিহি : দেশের যে কোনো স্থান থেকে খুলনা মহানগরীতে এসে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত দক্ষিণডিহি। ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছগাছালিতে ঠাসা সৌম্য-শান্ত গ্রাম দক্ষিণডিহি।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী আর কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীর জন্ম এ গ্রামেই। আর রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও দক্ষিণডিহিরই মেয়ে। তার আরেক নাম ভবতারিণী। বিয়ের পর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।

যৌবনে কবি কয়েকবার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামাবাড়িতে এসেছিলেন।

এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবণ এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়।

যেভাবে যাবেন পিঠাভোগ : খুলনা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্বে রূপসা উপজেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ব পুরুষের নিবাস পিঠাভোগ গ্রাম।

খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পরীক্ষামূলক সমীক্ষায় পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের ভিটার ভিত্তিপ্রস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে কবিগুরুর একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।

খুলনা শহর থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায় পিঠাভোগ গ্রামে।

খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জিনাত আরা রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনার ফুলতলাস্থ দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে খুলনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

২৫ বৈশাখ (৮ মে) বিকেল ৪টায় জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। প্রথম দিনে আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমাদের জীবনে রবীন্দ্রনাথ’। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টায় ।

২৬ বৈশাখ (শনিবার) অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হবে ‘রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা’ বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

২৭ বৈশাখ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ দিনে আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথের নাটক’। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

(ওএস/পিএস/মে ০৭, ২০১৫)