আহসানুল করিম,বাগেরহাট :বিশ্বের একক বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে রায়মঙ্গল-অঙ্গতিহারা-বজবুজা নৌপথ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের কার্গো চলাচলে নৌ প্রটোকল রুট।

এই নৌ প্রটোকল রুট দিয়ে প্রতি দিন চলাচলকারী কার্গো ও লাইটারেজ জাহাজ থেকে অব্যাহত বর্জ্য নিক্ষেপে পানি দূষণ ও বিকট সাইরেনের শব্দের কারণে বন্য প্রানী বনের এই এলাকা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। সুন্দরবন বিশেষঞ্জরা সতর্ক করে বলছেন, ১৪০ কিলোমিটারের এ নৌপথ দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত থাকলে ৯ ডিসেম্বরে শ্যালা নদীতে অয়েল ট্যাংকার ডুবে তেল ও ৫মে ভোলা নদীতে জাহাজ ডুবিতে পটাশ সার ছড়িয়ে পড়ার মতো আশংকা রয়েছে। আর এরকমটা হলে সেটা সুন্দবনের আরেক বিপর্যয় ডেকে আনবে। বিশেষঞ্জরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের কার্গো চলাচলে নৌ প্রটোকল এই রুটটি সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতের জাহাজগুলো। আর সেখান থেকে বজবুজা নদী দিয়ে অঙ্গতিহারা চেকপোস্ট হয়ে মংলা বন্দরে যাচ্ছে কার্গো ও লাইটারেজ জাহাজগুলো।
এবিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হারুন বলেন,দীর্ঘদিন ধরে নৌ-পথে যান চলাচল অব্যাহত থাকার কারনে শব্দ দূষণ তৈরি করেছে। আর এ দূষণ এড়াতেই সুন্দবনের গভীরে আশ্রয় নিচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। তত্ত্বাবধানের অভাবে সুন্দবনের নৌ-পথে চলাচলকারী যানগুলো নদীতে তাদের বর্জ্য ফেলছে। আর তা তৈরি করছে নদী দূষণ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দবনের পরিবেশ। তিনি বলেন, সারা দেশে যখন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তখন সুন্দরবন হচ্ছে প্রাণীদের শেষ আশ্রয়স্থল। মানুষের অস্বাভাবিক আচরণ ও দুর্যোগ সৃষ্টির কারণে প্রাণীদের জীবনযাত্রায় ব্যাতয় ঘটছে। আর তাই প্রাণীরাও তাদের আচরণে বদল ঘটাচ্ছে।

অঙ্গতিহারা স্থল চেকপোস্টের কাস্টম কর্মকর্তারা বলেছন, রায়মঙ্গল-অঙ্গতিহারা-বজবুজা নৌ-পথ দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি জাহাজ চলাচল করছে। সুন্দরবনের বনজীবী আবু জাফর বলেন, আগে হরিণ, বাঘ ও বন্যপ্রাণীদের যেখানে-সেখানে দেখতে পাওয়া যেত। জোয়ারের সময় হরিণরা চলে আসত লোকালয়ে। নৌপথে যান চলাচল বাড়ার পর থেকে এখন আর আগের মতো হরিণ, বাঘের দেখা মিলে না।
সুন্দরবন বিশেষঞ্জ ও পরিবেশবিদ ড: শেখ ফরিদুল ইসলাম বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকেই কোলকাতার হেমনগর বন্দর থেকে মংলা সমুদ্রবন্দরে মাল বোঝাই জাহাজ চলাচল করছে। আর এর ফলে ১৪০ কিলোমিটার লম্বা সুন্দবনের এ নৌপথে তার প্রভাব পড়ছে। ভারী ইঞ্জিনের যান চলাচল ও তাদের বিকট সাইরেনে সুন্দবনের পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তিনি
সুন্দরবন রক্ষায় অবিলম্বে রায়মঙ্গল-অঙ্গতিহারা-বজবুজা নৌ-পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করা প্রয়োজন বলে জানান।

সুন্দরবন পশ্চিমের বনবিভাগীয় কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আহমদ বলেন, শ্যালা নদীর ঘটনাটি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি আগাম বার্তা। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন রক্ষায় প্রয়োজন সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া ।গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। আর ৫মে ভোলা নদীতে প্রায় ৭শ’টন পটাশ সার বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবিতে হুমকিতে পড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনসহ প্রাণীকূল। ট্যাংকার ডুবে নদীর ১০০ বর্গ কিলোমিটারে তেল ছড়িয়ে পড়ে। আর এর ফলে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্যালা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ২০টি খাল ও পশুর নদী।

(একে/এসসি/মে০৯,২০১৫)