যশোর প্রতিনিধি : বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বন্দর শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় বেনাপোল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশ-শ্রমিক সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ৫০-৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়েছে। দুপুর থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে।

এ ঘটনায় আহতরা হলেন— কাউন্সিলর রাশেদুজ্জামান রাশেদ, সাংবাদিক মিলন খান, শ্রমিক ইদ্রিস আলী, আরাফাত আলী, পুলিশ কনস্টেবল শাখাওয়াত, মেজবা, একলাসসহ আরও তিন পুলিশ সদস্য।

এ সময় প্রায় ২ ঘণ্টা দেশের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল বন্ধ থাকে। এমনকি দুপুরের পর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ করে দেয় বন্দর শ্রমিকরা। বন্দরের অভ্যন্তরে কয়েক শ’ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়ে। গোটা চেকপোস্ট এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রবিবার দুপুর ২টার দিকে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ভবনে এ সংঘর্ষ শুরু হয়ে পুরো বন্দরনগরীতে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে বেনাপোল পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থলবন্দর হ্যাল্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ শাহিদা নামে নড়াইলের তার এক আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যায়। এ সময় ওই পাসপোর্টযাত্রীকে অহেতুক প্রশ্ন করে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ শ্রমিক নেতা রাশেদকে আটকে রেখে মারধর করে। বিষয়টি সাধারণ শ্রমিকরা জানতে পেরে সংঘবদ্ধ হয়ে জোরপূর্বক ইমিগ্রেশন ভবনে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। এতে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

ঘটনাটি ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল পোর্ট থানা ও শার্শা থানাকে অবহিত করলে ওই দুই থানার পুলিশ এ্যাকশনে নামে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ৫০-৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। গুলির শব্দে চেকপোস্টের আশপাশে দোকানপাট মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীসহ পাসপোর্টযাত্রীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে পাঁচজন আহত হয়।

শ্রমিক নেতা আহত ও আটকের প্রতিবাদে স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা বেনাপোল বন্দরে লোড-আনলোড বন্ধ করে দিয়ে বন্দরের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। বেনাপোল-যশোর সড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশন পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মমিনুদ্দিন জানান, রাশেদ কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বন্দর শ্রমিকরা চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। শ্রমিকদের হামলায় অন্তত ৬ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি সম্পত্তি ক্ষতির ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে কাউন্সিলর রাশেদসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক অন্যরা হলেন— শ্রমিক ইদ্রিস আলী, রাসেল, মনিরুজ্জামান, ঘটনার সূত্রপাত যাকে নিয়ে সেই মহিলা যাত্রী শাহিদা খাতুন ও তার স্বামী আসলাম হোসাইন।

ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান জানান, কাস্টমসের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ এগিয়ে গেলে শ্রমিকরা পুলিশের ওপর হামলা করেন। পরে পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছে।

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ওসি অপূর্ব হাসান ও শার্শা থানার ওসি ইনামুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বেনাপোলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

(ওএস/এএস/মে ১০, ২০১৫)