কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : দালালদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার জেলে বন্দী কুয়াকাটার চার যুবকের পরিবারে এখন চলছে শুধুই আহাজারি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জেলে বন্দী থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। ঠিক কবে তারা দেশে ফিরবেন, নাকি জেলেই বন্দী জীবন কাটাতে হবে এ দুশ্চিন্তায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

গত ৫ মে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে তিনমাস বন্দী থেকে টাকার জন্য দেশী-বিদেশী দালালদের অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মালয়শিয়ার টেরালিস কেবিএন এলাকায় পৌছলে মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কুয়াকাটার আব্দুল খালেকের ছেলে আলমগীর (২৭), বাদশা মিয়ার ছেলে মিরাজ (২৬), লতিফ মিস্ত্রির ছেলে আল আমিন(২৫) ও আলীপুর বাজারের জালাল মাঝির ছেলে বাহাদুর (২৮)।

মালয়েশিয়ার জেলে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে যশোরের যুবক সিরাজ মিয়া টেলিফোন করে জানায় কুয়াকাটার ওই যুবক মালয়েশিয়ার জেলে বন্দী আছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তাদের পরিবারের লোকজন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক লাখ টাকা চুক্তিতে থাইল্যান্ডে ভালো কাজ দেয়ার নাম করেকুয়াকাটার দালাল জাকির ও জাহাঙ্গীরসহ কক্সবাজারের আব্দুস সালামের মাধ্যমে অবৈধ পথে ট্রলারযোগে এদেরকে ভিনদেশী দালালদের হাতে তুলে দেয়।

সদ্য বিয়ে করা মিরাজের স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন,মোগো সংসার ভালোই চলছিলো। উনি (মিরাজ) সাগরে মাছ ধরতেন। তিনমাস আগে থাইল্যান্ড যাওয়ার আগে কইছে,কয়ডা বছর থাইক্কা আইলে আমাগো আর কষ্ট করতে হইবে না। আমাগো কষ্টের কথা চিন্তা কইরা বিদেশ যাইয়া এ্যাহন নিজেই জেলে আটকা পড়ছে। দালালরা কইছে ভালো কাজ দেবে। তাইলে এ্যাহন জেলে বন্দী ক্যা। মোরা গরিব মুর্খ মানুষ। মোর স্বামীরে এ্যাহন ক্যামনে ছাড়াইয়া আনমু।

বাহাদুরের শ্বাশুড়ী কোহিনুর বেগম বলেন, রোজ টিভিতে দেহি মানুষের খালি কংকাল পাইতাছে। কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন, ‘আমার বাপরা এহোনো বাইচ্চা আছে, আমি নিজে মালয়েশিয়ার সিরাজ মিয়ার সাথে কতা কইছি। আমার কইলজার ধনগো একটু আইন্যা দেন। দালালরা এত টাকা নেছে কিছু টাহা ফেরত দেলেও আমার বাপগোরে আনতে পারি।

আলমগীরের বাবা আব্দুল খালেক হাওলাদার ছেলের চিন্তায় এখন অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পোলারে কত নির্যাতন করছে দালালরা হ্যার কোন সীমা নাই। জেল খানায় ওরা ভাল নাই। কিভাবে যে ফিরাইয়া আনমু জানি না। দাদালরা পলাইয়া আছে। কোন টাকা পয়সা দেয়না।’

কুয়াকাটার দালাল জাকির ও জাহাঙ্গীরের বাসায় গেলে তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ঘর তালাবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, তারা প্রায়ই এভাবে ঘর আটকে চলে যায়। স্থানীয়দের দাবি,এই দালালদের আটক করলেই এই মানব পাচাকারী চক্রের মূলহোতাদের ধরা যাবে। সেই সাথে তারা সরকারের কাছে দাবি করেন কুয়াকাটার চার যুবককে ফিরিয়ে আনতে উদ্যেগ নেয়া হোক।

কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সঞ্জয় মন্ডল জানান, কুয়াকাটার চার যুবক মালয়েশিয়ার জেলে বন্দী এ খবর পেয়েছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যেগ নিতে হবে। থানায় অভিযোগ করলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এমকেআর/এএস/মে ১২, ২০১৫)