ডেস্ক রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে ৮০ শতাংশ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা মামলার তদন্তকালে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্টে দাখিল করা তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে জনপ্রশাসন, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাব, সিআইডি ও হাইকোর্টের আদেশে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদালতে সিআইডির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিভাগীয় ইনস্পেক্টর জেনারেল তাদের মামলার তদন্তের তদারকি করছেন। এ ছাড়া মামলার আসামিদের গ্রেফতারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তারা।

এ সময় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, সিআইডির প্রতিবেদনে বলা আছে স্থানীয় লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত। আতঙ্ক দূর করার জন্য একটা ব্যবস্থা নিন।

আদালত আরও বলেন, সিআইডির রিপোর্টটি ভালো। কিন্তু আতঙ্ক দূর করার জন্য তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাছাড়া তারা কোনো পদক্ষেপের সুপারিশও করেনি। সুতরাং আতঙ্ক দূর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন আদালত।

আদালতে দাখিল করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে হত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না- এবং সাতজনকে অপহরণের সংবাদ শোনার পর তাদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো প্রকার গাফলতি ছিল কি না- তা দেখা হয়েছে।

পুলিশ মহাপরিদর্শকের দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, পুলিশের তদন্তকালে ৭ জনের মৃতদেহ ভর্তি ১২টি বস্তা, মৃত ব্যক্তিদের কাপড়-চোপড়, ব্যবহৃত গাড়ি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই ৫৪ ধারায় ১১ জনেকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

আদালতে র‌্যাবের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় ১৬ র‌্যাব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

সাত সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব স্থান, আলামত দেখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এবং নিহতদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ সংরক্ষণ করে তা পর্যালোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় রিপোর্টে।

আদালতে এ সব রিপোর্ট দাখিল করার পর তদন্ত শেষ করতে চার সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এরপর আদালত আগামী ৪ জুন এ বিষয়ে সব কমিটিকে আবারও তাদের পরবর্তী তদন্তের অগ্রগতি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে আদেশ দেন।

এর আগে বুধবার তদন্ত কমিটির সদস্য আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মিজানুর রহমান খান অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদনগুলো জমা দেন।

নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনায় ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্তি সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ ঘটনায় র‌্যাবের কোনো সাবেক বা বর্তমান সদস্যের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না- তা খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আইন মন্ত্রণালয়ের দুইজন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুইজন এবং জন প্রসাশন মন্ত্রণালয়ের দুইজনসহ মোট সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন আদালত।

(ওএস/এইচআর/মে ১৬, ২০১৪)