কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : জোসনার আলোর মত ফুটফুটে আয়েশার বয়স সবে মাত্র দু’বছর। এবয়সে আর পাঁচজন ছেলে-মেয়েরই মতই সে কথা বলে, খেলা করে, কখনো বা দুষ্টুমি করে বড় আপু, বাবা-মা বা আগত মেহমানদের সাথে। তার এমন আচরণে বয়স অনুপাতে মনে হয় একটু বেশিই বুদ্ধিমতি। এমন মেয়েকে নিয়ে প্রত্যেক বাবা-মা’ই স্বপ্ন দেখে সন্তানের অনাগত ভবিষ্যতের। আয়েশার বাবা-মা সে স্বপ্ন দেখে ঘোর অন্ধকার চোখে। সে স্বপ্ন যেন বেদনার নীলকষ্টে হিম শীতল কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যেতে চাই। তবুও তার বাবা-মা এক বুক আশা বুকে বেঁধে হন্যে হয়ে চলেছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

কখনো পল্লী থেকে নগর-মহানগরে, কখনো কলিকাতা থেকে চেন্নাই-ভেলর বা দক্ষিণ ভারতে। শ্রম আর অর্থ দুটোই শেষ হচ্ছে, শেষ হচ্ছে না স্বপ্ন ফেরীওয়ালা বাবা-মা’র। কোথাও এতটুকু আশার বাণী শোনাতে পারেনি কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নিজের পায়ে হেঁটে আয়েশা ঘরের বাইরে গিয়ে দেখবেনা বাইরের পৃথিবী, নিজ পায়ে ভর করে দেখবেনা ভোরের আলো কিংবা গোধূলী লগ্ন। নিজ পায়ে বিদ্যাপীঠে গিয়ে হাতে খড়ি নিবে না কিংবা হুড়োহুড়ি করে ফিরবে না স্কুলের ছুটির ঘন্টার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষামান মায়ের কাছে। তবুও হাল ছাড়েনি জন্মগত ব্যাধিতে আক্রান্ত আয়েশার নিম্নবিত্ত বাবা, গৃহিণী মা, নিত্যশুভার্থী আর স্বজনেরা। অন্যের অনুগ্রহ বা হুইল চেয়ারের লাইফ সাপোর্ট ছাড়াই ঘুরে দাঁড়াবে আয়েশা, এমন আশায় এখনো খুঁজে আয়েশার পরিবার।

আয়েশা জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার ডান পায়ের Knee Cap থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত জন্মগতভাবে বিকলাঙ্গ যা সম্পুর্ণ রুপে অকেজো। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো হয়েছে। অনেক ডাক্তারই রোগটি সম্পর্কে পূর্বাপর কোন ধারনা কিংবা চিকিৎসা বিষয়ে কোন পরামর্শও দিতে পারেননি। তবে তারা বলেছে, আয়েশা এপায়ে ভর করে হাঁটবে না, এপায়ে ভর করে খেলবে না অন্য শিশুদের মত। ক্রাচে ভর করে কিংবা হুইল চেয়ারে বসেই বাকি জীবন কাটাতে হবে। আবার কোন কোন ডাক্তার Amputation করিয়ে Artificial Leg ব্যবহারের কথাও জানিয়েছেন। আবার কোন কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানিয়েছেন, ডান পায়ের Knee Cap থেকে Ankle পর্যন্ত Tibial ও Fibua নামক দু’টি হাঁড় থাকে, তার একটি হাঁড় জন্মগতভাবেই তৈরী হয়নি, আবার যে হাঁড়টি আছে তাও আকারে বাম পায়ের হাঁড় থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। তার সুচিকিৎসার জন্য Multiple Reconstructive & Leg Lengthening Surgery প্রয়োজন। যা অনেক ব্যয় বহুল ও সময় সাপেক্ষ্য। চিকিৎসা শুরু থেকে প্রায় দশ বছর পর্যন্ত Follow-up Tretment চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসাটি Orthopedic, সে কারণে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চিকিৎসা জটিল আকার ধারন করবে, তাই যত ছোট বয়সে চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভাল। তার সার্বিক চিকিৎসার জন্য প্রায় দশ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এত সব পরামর্শ যেন জগদ্দল পাথরের মত ঝেঁকে বসেছে আয়েশার পরিবারের উপর। কেননা একদিকে নবাগত সন্তানের ভবিষ্যত জীবনের চিন্তা, অন্যদিকে এত টাকা জোগাড় করে এব্যয়-বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া আয়েশার পরিবারের পক্ষে সম্পুর্ন রুপে সম্ভব নয়।

সৃষ্টি কর্তার কৃপায় সম্ভব বলে কিছু নেই। তবুও কারো না কারো উসিলা হিসাবে ঘুরে দাঁড়ায় হতাশায় ডুবে যাওয়া মানুষের জীবন। যদি কারো এরোগ কিংবা চিকিৎসা সম্পর্কে নূন্যতম ধারনা থেকে থাকে বা কোথাই গেলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েও এগিয়ে নিতে পারেন। সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে অনাগত একটি ভবিষ্যত, সুন্দর একটি জীবনের জন্য আপনার সহৃদয়-সহযোগিতা ও পরামর্শে আয়েশার জীবনও ঘুরে দাঁড়াতে পারে। [email protected], [email protected], Mobile : 01712-514927 (On Req.) 01721-506140 (8.00pm-8.00am) অথবা কাঞ্চন কুমার, সদস্য কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব, মোবাইল-০১৭১৩৯১৯৮৩৪ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

(কেকে/এএস/মে ১৫, ২০১৫)