ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ১৭ মে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার কাঠীপাড়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা গণহত্যা চালায় হিন্দু অধ্যুষিত এই এলাকায়। নির্যাতনসহ গুলি করে হত্যা করে শতশত নারী পুরুষদের।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের মার্চ মাসে কবর খুঁড়ে শত শত মানুষের কঙ্কাল পাওয়ার মধ্য দিয়ে আবিষ্কৃত হয় এই কাঠীপাড়া বধ্যভূমি। এর বাস্তবতা প্রমাণে দেশব্যাপি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হলেও ওই গণহত্যার শিকার কোন শহীদ পরিবারের কপালেই জোটেনি স্বীকৃতি। নির্মিত হয়নি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোন বধ্যভূমি।

১৯৭১ সালের ১৭ মে পাক হানাদার ও স্থানীয় দোসররা কাঠিপাড়ার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় নারী নির্যাতনসহ হত্যাকান্ড শুরু করে। যুদ্বকালীন সময়ে প্রাণ বাঁচাতে শুক্তাগড় ও সাতুরিয়া ইউনিয়নের অনেক গ্রামের শত শত সংখ্যালঘু ওই দিন ঠাকুরবাড়ির জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাক হানাদাররা ওই জঙ্গল ঘেরাও করে নির্বিচারে নারী নির্যাতনসহ হত্যা করে শত শত নিরীহ নারী-পুরুষকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দু'দিন পর স্থানীয়রা একটি গর্ত করে সব লাশ মাটিচাপা দিয়ে রাখে। ২০১০ সালের মার্চ মাসে জঙ্গলের মাটি খুঁড়তে গিয়ে একে একে বের হয়ে আসে শত শত কঙ্কাল। তখন আবিস্কৃত হয় এই বধ্যভূমিটি। এ নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায় গোটা বাংলাদেশে।

এরপর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালও ছুটে যায় ওই এলাকায়। উদ্ধারকৃত কঙ্কালগুলো ঢাকায় নিয়ে আসে। তবে এরপর আর শহীদ পরিবারগুলোর কেউ খোঁজ খবর রাখেনি।

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হয়ে গেলেও অর্ধশত শহীদ পরিবারের কেউ কোন সরকারি সহযোগিতা তো দূরের কথা পায়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতিটুকুও। বাবা-মা আত্মীয় স্বজন হারিয়ে শহীদ পরিবারগুলো এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে।

অপরদিকে শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। জঙ্গলে ঘেরা ওই জায়গায় একটি জরাজীর্ণ নামফলক ছাড়া আর কিছুই নেই।

রবিবার এই দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয় । এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন রাজাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব শাহ আলম নান্নু, অধ্যাপক জনাব আবুল হোসেন ফরাজী, ২ নং শুক্তাগড় ইউনিয়ন আ'লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলী, আফজাল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউনুছ ডাকুয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মুনসুর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মান্নান মৃধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্কাছ আলী মৃধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ রশিদ খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়রাম তেওয়ারী, শুক্তাগড় ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল হোসেন, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি সাংবাদিক রহিম রেজা, সাংবাদিক ও কলাম লেখক অনলাইন দৈনিক সমবাদ সম্পাদক শেখ মোঃ মিজানুর রহমান পনা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় ইদ্রিস আলী তার বক্তব্যে বলেন, ‘শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি না পেলেও স্বজনহারাদের বেদনা ঘোচানোর জন্য এখানে একটি বধ্যভূমি নির্মান করে শহীদদের নামের তালিকা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং এই গনহত্যা পরিচালনাকারী রাজাকারদের দেশের আইনে চলমান শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহ আলম নান্নু তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা শহীদ পরিবারের নামের তালিকা একাধিকবার প্রেরণ করলেও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে আজ পর্যন্ত কোন শহীদ পরিবার স্বীকৃতি পায়নি, যা দেশ তথা জাতির জন্য অত্যন্ত দু:খজনক।’

আলোচনা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউনুছ, ডাকুয়ার ছেলে মোঃ বাদল হোসেন শহীদ পরিবারের স্বজনদের মাজে কাপড় বিতরন করেন।

(এমপি/পিএস/মে ১৭, ২০১৫)