শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের লাউখোলা এলাকায় এক বৃদ্ধের গলাকাটা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

একই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। নিহতের মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে লাউখোলা গ্রামের ফজল মাঝি, মাষ্টার সামছুল হক মাঝি, লাল মিয়া মাঝি ও সোনামিয়া মাঝির সাথে খালেক মাঝির জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ নিয়ে ফজল মাঝির ছেলে জাহাঙ্গীর ও আলমগীর মাঝি একাধিকবার খালেক মাঝিকে বিভিন্ন রকমের হুমকি প্রদান করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার সুত্র ধরেই মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে খালেক মাঝিকে হত্যা এবং তর স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে অজ্ঞাত পরিচিত কয়েকজন লোক খালেক মাঝির ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে টেনে হিচড়ে বেড় করে নেয়। এ সময় খালেক মাঝির স্ত্রী উজালা বেগম দুর্বৃত্তদের বাধা দিলে তাকে কুপিয়ে জখম করে তার স্বামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। উজালা বেগমের ডাক-চিৎকারে এলাকার লোকজন এসে জানতে পারে খালেক মাঝিকে ঘর থেকে ঘরে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর এলাকাবসী তাকে খোজাখুজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত ১টার দিকে সামসুল হক মাষ্টারের বাড়ির পিছনে কড়ই গাছের সাথে তার মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় এলাকাবাসী । তখন তারা জাজিরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে বুধবার ভোরে লাশ উদ্ধা করে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়।

খালেক মাঝির ভাতিজী জামাই শাহজাহান পেদা বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে আমার ফুফা শ্বশুর খালেক মাঝি ও তার স্ত্রী উজালা বেগম ঘুমিয়ে ছিলেন। এমন সময় হঠাৎ অজ্ঞাত কয়েক ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে খালেক মাঝিকে টেনে হিচড়ে বেড় করে নেয়ার চেষ্টা করে। তখন তার স্ত্রী বাধা দিলে তাকে ধারালো অন্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এরপর আমরা খোজাখুজির এক পর্যায়ে সামছুল হক মাষ্টারের কড়ই গাছের সাথে খালেক মাঝির গলাকাটা ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেই। তিনি আরও বলেন, আমার ফুফা শ্বশুরের সাথে তার ভাইদের জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এ নিয়ে জাজিরা থানায় মামলা মোকদ্দমা চলছিল। নিহত খালেক মাঝির কোন ছেলে সন্তান নেই।

মুলনা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ মজিবুর রহমান খান বলেন, আমরা জানি খালেক মাঝির সাথে তার ভাইদের জমিজমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এলাকায় তার অন্য কোন শত্রু ছিল না। জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তমূলক বিচার দাবি করছি।

জাজিরা থানার অফিসার ইন চার্জ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থা নিহতের মরদেহ উদ্ধার করি। নিহতের গলা ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে কোন দুর্বৃত্ত তাকে কুপিয়ে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখেছে। একই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। সামছুল হক মাষ্টার নামে একজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

(কেএনআই/এএস/মে ২০, ২০১৫)