একটা সময় ছিল যখন শুধু শখের বশে কবুতর পোষতেন মানুষজন। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও তখন ব্যবহার করা হতো এই কবুতর। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হয়তো যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কাগুজে ব্যবস্থা থেকে ইন্টারনেটে গড়িয়েছে মানুষের মিথস্ক্রিয়া।

কিন্তু শখের কবুতর তো আর বোঝা হয়ে যায়নি। আর তা হয়নি বলেই কবুতর এখন অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখাচ্ছে বহু মানুষকে।

আশরাফ মিয়া ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাশ করেছেন। থাকেন রায়েরবাগের মামার বাড়িতে। অভাবের সংসারে খরচ বাঁচাতে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি। অন্যের দোকানে কাজ করতেন মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতনে। এতো অল্প টাকায় দুই ভাই আর মাকে নিয়ে ছোট্ট সংসারের হাল টানাটা তার জন্য অনেক কষ্টের ছিল। একদিন বন্ধুর পরামর্শে ৬০০ টাকা দিয়ে একজোড়া সবুজগোলা জাতের কবুতর কিনেন কাঁটাবন থেকে। সেটা ছিল ২০০৮ সালের কথা। বর্তমানে আশরাফের কাছে ২৬ জাতের কবুতর আছে। আর এই শখের কবুতরের ব্যবসা করে তিনি আজ লাখপতি।

আশরাফের মতো আরও অনেকেই আছেন যারা শুক্রবার এলেই পোষা কবুতর নিয়ে চলে আসেন গুলিস্তানের ফ্লাইওভারের নিচে। এখানে দেশি-বিদেশি নানা জাতের কবুতর পাওয়া যায়। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও অনেকেই এখানে আসেন কবুতর কিনতে।

টঙ্গী থেকে নাসিম এসেছেন কবুতর বিক্রি করতে। ৩৫০০ টাকা দিয়ে একজোড়া বল জাতের কবুতর বিক্রি করেছেন তিনি। পরে বিক্রির টাকা দিয়ে আরও একজোড়া মিলি জাতের কবুতর কিনেছেন ১৮০০ টাকা দিয়ে। প্রতি শুক্রবারেই তিনি এখানে কবুতর নিয়ে আসেন বলে জানান।

স্থানীয় কবুতর ব্যবসায়ী আজমত আলী জানান, কবুতরের এই বাজার তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন। তবে ঠিক কবে থেকে বাজার বসছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, শখ করে যারা কবুতর পোষেন মূলত তারাই এখানে আসেন। আর এ কারণেই এই বাজারের কবুতরের দাম অন্যান্য জায়গার তুলনায় একটু বেশি।

বাজারে কবুতরের জাত ও রং ভেদে দামের ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। একজোড়া রেস আর কবুতর কবুতর বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়, ময়ুরী জাত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, শাটিং জাতের কবুতর ২ হাজার টাকায়, সিরাজী জাতের কবুতর ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বাজারে।

এছাড়াও কিং জাতের লাল কিং ৬ হাজার টাকা, সাদা কিং ৬ হাজার ৫০০, প্রতি জোড়া দেশি গোল্লা ৬০০ টাকা, বোম্বাই গোল্লা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, গরবা জাতের কবুতর ৭০০ টাকা, মুসলদম ১ হাজার টাকা, বাগা জাতের কবুতর ৮০০ টাকা দামে হাকিয়েছেন বিক্রেতারা।

অন্যদিকে কালদম জাতের কবুতর ১ হাজার ৬০০ টাকা, লক্ষ্যা জাত ২ হাজার ৫০০ টাকা, হোমার জাতের একজোড়া কবুতর ১২ হাজার টাকা, সাদা ফিলব্যাক ১৮ হাজার টাকা, হলুদ ফিলব্যাক ৩০ হাজার টাকা, হলুদ ভুটান জাতের কবুতর ৫ হাজার টাকা, নান কালো কবুতর ৬ হাজার, সাদা বোখারা ১৫ হাজার টাকা, হলুদ রেন জাত ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

বাজারে সবচেয়ে দামি কবুতর দেখা গেছে আফ্রিকার কেরিয়ার হুমার। একজোড়া হুমার জাত কবুতরের দাম ৪০ হাজার টাকা। এই কবুতরের মালিক কুমিল্লার আমিনুল মিয়া জানালেন, তার কাছে ১০ হাজার টাকা মূল্যের মডেনা জাতের কবুতরও আছে। আর কবুতর বিক্রি করে তার প্রতি মাসে আয় হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

এছাড়াও বাজারে দেখা গেছে হল্যান্ডের লাল ও হলুদ জাতের কোটারবল কবুতর। বিক্রতারা এগুলোর দাম হাকিয়েছেন প্রতি জোড়া ৩০ হাজার টাকা। এছাড়াও বিউটি হুমার ৬ হাজার টাকা, অষ্ট্রেলিয়ান কিং ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও ব্লু কিং জাতের কবুতর ১০ হাজার টাকা জোড়া দাম হাকছেন তারা।

বাজারে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে গ্রীবাজ জাতের কবুতর। এক বিক্রেতা জানান, যারা শখের বষে কবুতর পোষেন তাদের কাছে এই জাতের কবুতরের কদর অনেক বেশি। কারণ এর মধ্যে ৫০ ধরনের কবুতর রয়েছে। আর এগুলোর দাম ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বলেও জানান তিনি।

(ওএস/এস/মে ১৬, ২০১৪)