শেখর রায় : আমি সাংবাদিকতা থেকে আছি অনেক দূরে। এর জন্য আপসোস নেই। কারণ জাফর ওয়াজেদ এখনো তার হাতের চাবুকটি নামাননি। তিনি লিখে যাচ্ছেন এবং প্রতি মুহূর্তে অনুজদের শিখিয়ে যাচ্ছেন নির্ভীক সাংবাদিকতার পাঠ। তিনি সত্য ভাষণ প্রকাশে কাউকে রেয়াত করেন না।

সে সরকারি হোক বা বিরোধী। সাংবাদিকের সমস্যা হল, যখন সে বিরুদ্ধ রাজনীতির নেত্রীত্বের বিরুদ্ধে কলম ধরেন তখন সরকার পক্ষ বাহ বাহ করে থাকেন, কিন্তু যেই চাবুকের কষাঘাত সরকারের পিঠে পড়ে, তখন আর তার সমর্থনে লোক খুজে পাওয়া যায় না। আসলে কেউ অন্তর দিয়ে নির্ভীক ও সাহসী সংবাদ মাধ্যম বা তেমন চরিত্রের সাংবাদিক বা লেখককে পছন্দ করেন না।

সব রাজনীতির নেতা নেত্রীরা কামনা করেন স্তাবক সাংবাদিকতা। সংবাদ মাধ্যম নাকি গণতন্ত্রের চতুর্থ পিলার তেমন কথা কেতাবে থাকলেও বা জনসাধারণ সাহসী ও নির্ভীক সাংবাদিকতা আশা করলেও, ক্ষমতাসীন বা ক্ষমতাহীনের দুশ্চিন্তা কমে না। আসলে ভয় সেই মানুষদের নির্ভীকতাকে। যাদের কোন উপঢৌকন দিয়ে কেনা যায় না। যৌবনে জাফর, চাটগায়ে থেকে সাংবাদিকের কাজ করার সময় বামপন্থী সাইফুদ্দিন খানের বাড়িতে রোজ ডাল ভাত খেতেন, কিন্তু তিনি কোন ধান্দাবাজি করে পেশার সুনাম নষ্ট করেন নি। আর এখনতো তার জীবনের শেষ প্রহর। নীতির সাথে আপোষ করার প্রশ্নই আর নেই।

সেই প্রবীণ সাংবাদিক আজ বদর বাহিনী ও পাক পুষ্ট জামায়াত জে এম বি হেফাজতি আক্রমনের লক্ষবস্তু হলেন। কারণ তিনি প্রমাণ হাতে রেখে সাহসের সাথে তার দেশের সীমান্ত পাহারাদার বাহিনীর এক প্রাক্তন বিতর্কিত প্রধানের বিরুদ্ধে তার শাণিত কলমে উন্মচিত করেছেন বহু সত্য কাহিনী যার বহু প্রমাণ প্রতিবেশি দেশের কাছে আছে। এই বিতর্কিত প্রধানটির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ তার দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতেও বর্তমান যে সে তার কর্মরত অবস্থায় নিজ দেশের এক বিশ্বাস ঘাতক ছিলেন এবং আজো পাক আইএসআই সেবক- এ ব্যাপারে জাফরকে বেশি অপদস্থ করার চেষ্টা করলে নিজের সমসা নিজেই বাড়াবেন। আর ভারতীয় সীমান্ত প্রহরীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার মত নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেন এবং মাওবাদী ইত্যাদি তকমা লাগান যার আজো বিচার হয় নি। সেই নৃশংসতা এমন একটি দেশের বিরুদ্ধে সংগঠিত করা হয় এই প্রধানের আদেশে যারা সর্ব শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে।

জাফরের কলমে ওই প্রাক্তন সীমান্ত পুলিশ প্রধানের মুখোশ খুলে যাবার সাথে সাথে ঝাপিয়ে পড়েছে তার কট্টর মৌলবাদী ভারত বিদ্বেষী পাক সমর্থকের দলবল। যাদের কাছে জাফরতো দূর, স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ছিলেন ভারতের দালাল। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের বিরুদ্ধাচারণের কথা আর নাই বা উল্লেখ করলাম। গণতান্ত্রিক ও চেতনাশীল সমাজ ও সরকার যদি জাফরের বিরুদ্ধে এই আক্রমণকে চলতে দ্যায়, তবে দ্বিধা নেই বলতে যে স্বাধীন সাংবাদিকতার কবর খোঁড়ার দিন প্রায় শুরু হয়ে গেল। সুতরাং, জাফর ওয়াজেদ হারলে, হারবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, হারবে বঙ্গবন্ধু, হারবে তার প্রিয় দেশটি।

লেখক : পশ্চিমবঙ্গের লেখক-গবেষক