দীপক চক্রবর্তী মাগুরা থেকে : হাজার-হাজার পূণ্যার্থীর পদচারনায় মুখরিত হলো মাগুরার  শালিখা উপজেলার চুকিনগর ও গঙ্গারামপুর গ্রামের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী গঙ্গা পূজা ও স্নান উপলক্ষ্যে দিনভর মেলা। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে এ পূজা ও স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার  অনুষ্ঠিত হলো পূজা, স্নান ও মেলা।

ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্তু চলে এ মেলা। দূর-দুরান্ত থেকে আগত দোকানীরা মেলার কয়েক দিন পূর্ব থেকেই তাদের বিভিন্ন রকমের পসরা সাজিয়ে বসেছিলো। মাটির তৈরি কুমারের হরেক রকমের হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, হাতী,ঘোড়া-গরুসহ বিভিন্ন রকমের দ্রব্য মেলায় আগত ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করে। মেলায় নাগর দোলা থেকে শুরু করে কামারের তৈরি দা-বটি,কুড়াল, কোদাল, ছুরিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য সাজিয়ে বসে দোকানীরা।

এ ছাড়া বাঁশ-বেত শিল্পের মধ্যে ধামা, কুলা, চালনী, ঝাঁকাসহ বিভিন্ন রকম ফুলের সাজি, মোড়াও ছিল চোখে পড়ার মতো। কাঠের তৈরি চেয়ার-টেবিল, খাটসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রও বাদ যায়নি এ মেলায়। মেলার এক প্রান্তে দেখা গেলো ছেলে-মেয়েদের প্রচণ্ড ভীড়। ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই দেখা গেলো মেলার আর এক অন্যতম অন্যতম আর্কষণ বায়স্কোপ। বাক্সের ভিতর আছে ছবি। একজন ডুগ-ডুগির বাজনার তালে-তালে নৃত্যের ভঙ্গীতে গাইতে থাকে এই যে হলো সদর ঘাট, সামনে নবাবপুর...

আর সূর্যোদয়ের পূর্বেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলে-দলে আসতে শুরু করে শিশু,কিশোর-কিশোরী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তারা পূর্ণ সঞ্চয়ের আশায় যোগ দেয় স্নান, পূজায়। ফুল-বাতাসা, লবন-চিনি, ডাব-গাব নিয়ে সকলেই নেমে পড়ে ফটকী নদীর বারাঙ্গার জলে। স্নান শেষে জলে দাঁড়িয়েই তাদের আরাধ্য দেবী গঙ্গার উদ্দেশে প্রার্থনা করে গঙ্গা থেকে উঠে পড়ে। ভারত থেকে আসা বয়োবৃদ্ধা আরতী রানী জানান তিনি এখানে প্রায় ২০ বছর পূর্বে মানোত করেছিলেন তার একমাত্র সন্তান দেবাষীশের সন্তান হলে তিনি ডাব ও গাব দিয়ে এখানে স্নান করবেন। তার মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ায় তিনি ভারত থেকে ছুটে এসেছেন মানোত পরিশোধের জন্য। শুধু আরতীই নয় হাজার-হাজার ভক্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন এ পূণ্য ভূমিতে পূণ্য সঞ্চয়ের লক্ষে।

উপজেলার নাঘোষা গ্রামের মনছুর আলী জানান, তিনি একটা রোগের জন্য বহু ওষুধ পত্র খেয়েও সুস্থ না হওয়ায় অবশেষে এখানে এসে মানোত করে আজ আমি সুস্থ। তাই মানত শোধ করতেই এখানে এসেছি। মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুকুমার মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক সীতান চন্দ্র বিশ্বাস, প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল, রমেন্দনাথ বিশ্বাসসহ অসংখ্য ব্যক্তি জানান তাদের ঠাকুরদাদাদের মুখেও তারা এখানের বর্ণনা শুনেছেন গল্প কথার মতো। এখানে পূর্বে যে যা চাইতো তাই পাইতো।এখনও কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করলে কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। আর যার ফলে প্রতি বছর এ পূণ্য ভূমিতে হাজার-হাজার ভক্ত এখানে জমায়েত হয়।

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহ উপেক্ষো করে পূণ্যার্থীরা মিলিত হয় এ পূণ্যভূমিতে। ছোট-ছোট ছেলে মেয়েদের দেখা যায় নাগর দোলায় চড়ে আনন্দ উপভোগ করতে। শিশুদের বাঁশির আওয়াজে মেলা প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে ওঠে। কমিটির পরিচালনা পর্ষদের স্বেচ্ছাসেবক ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমে মেলাটি সুন্দর ভাবে পরিচালিত হয়।

(ডিসি/এএস/মে ২৮, ২০১৫)