তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : একবেলা খেয়ে অন্যবেলা না খেয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজের প্রাণপন চেষ্টায় সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মোঃ আশরাফুল ইসলাম।

অদ্যম মেধাবী আশরাফুল দারিদ্র্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের একক চেষ্টায় এবং স্কুল শিক্ষক ও পিতামাতার অনুপ্রেরণায় এতদূর আসতে পেরেছে। তার বাড়ি তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামে।

উপজেলার কুন্দইল বিলচলন বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করে। তার পিতা মোঃ খোয়াজ উদ্দিন একজন ভুমিহীন দিন মজুর। নিজের ৩ শতক বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই ওই পরিবারের। মা ময়না খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পেত তাই নিয়ে ছেলে মেয়েদের মুখে হয়ত একবেলা একমুঠো অন্ন তুলে দিত।

স্কুল ছুটি থাকলে আশরাফুল পিতার সাথে অন্যের বাড়িতে মাঠে ধান লাগানো থেকে শুরু করে সব কাজ করতো। অর্থের অভাবে সে কখনো প্রাইভেট পড়তে পারেনি। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে মাঝেমধ্যে বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়িয়েছেন।

মাথা গোঁজার ঠাই বলতে তাদের বাড়িতে মাটির দেয়াল ও উপরে খোলা ছাউনিড় একখানা ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। ওই ঘরের মধ্যে পরিবারের লোকজন নিয়ে বাস করত খোয়াজ উদ্দিন ও তার পরিবার। মাঠে কাজ না থাকলে তার পিতা অন্যের বাড়িতে ঘরের মিস্ত্রির কাজ করত। যে টাকা পেত তা দিয়ে ৫ জনের সংসার চালানো তাদের কষ্টসাধ্য হয়ে পরতো।

অনেক সময় স্কুলে না খেয়ে যেত হত। কখনো সে ঠিকমত আর ৫ জন ছাত্রের মত খেয়ে স্কুল করতে পারেনি আশরাফুল। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা খাবার পেত তাই নিয়ে বাড়িতে এসে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে করে ভাগ করে খেত। বেশির ভাগ সময় না খেয়েই আশরাফুলকে স্কুলে যেতে হয়েছে। অর্থের অভাবে জীবনে ভাল জামাকাপড় সে পড়তে পারেনি। এক জামা এক প্যান্ট পরে স্কুল করত এবং এসএসসি পরীক্ষাও দিয়েছে একটি জামা পরে।

যাদের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায় তাদের ভাগ্যে ভাল জামাকাপড় জোটে কিভাবে! তারপরও দারিদ্র্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজের একক চেষ্টায় আশরাফুল ইসলাম সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ প্লাস পেয়ে গ্রামবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

আশরাফুল ভবিষ্যতে লেখাপড়া করে সে ডাক্তার হয়ে মানব সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। কিন্তু বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপাড়া চালানোর মত অর্থ ও সাধ্য তার পরিবারের নেই। মেধা আছে, তাই ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারবে- সে বিশ্বাস তার আছে। কিন্তু তার পেছনে অর্থের যোগান নেই। হয়ত অর্থের অভাবেই এক সময় তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তার পরিবার সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।

(এমএমএইচ/পিএস/জুন ০৬, ২০১৫)