স্পোর্টস ডেস্ক : অবশেষে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ফুটবলের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটার। দীর্ঘদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাসহ নানা কারণে বিতর্কিত ফিফা প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এ ঘোষণা দেন।

 

তিনি বলেছেন, ফিফার জরুরি অধিবেশনে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হবে। তার আগে আগে পর্যন্ত তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন। এই সময়ের মধ্যে ফিফার উল্লেখযোগ্য কিছু সংস্কার অভিযান চালানোরও ঘোষণা দিয়েছেন ব্ল্যাটার।

সম্প্রতি ফিফার প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন সেপ ব্ল্যাটার। এর দু’দিন আগে ফিফার সাত কর্মকর্তা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ায় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সততা ফের প্রশ্নের সম্মুখিন হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আটক করা হয়। ঘটনার পরপরই আগামী ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজন প্রক্রিয়া নিয়ে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে সুইজারল্যান্ড পুলিশ। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে ১১ কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে ফিফা।

এ পরিস্থিতিতে ব্ল্যাটারের পূননির্বাচনের প্রচণ্ড বিরোধিতা করে ইউরোপের দেশগুলো। দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও পঞ্চমবারের মত ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ব্ল্যাটার। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভোটেই মূলতঃ নির্বাচিত হয়ে যান এই সুইস ফুটবল প্রশাসক। যদিও বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি ইউরোপ। তারা একজোট হয়ে হঠাৎই ঘোষণা দেয় ২০১৮ বিশ্বকাপ বয়কট করার এবং একটি বিকল্প বিশ্বকাপ আয়োজনের।

বিষয়টা নিয়ে আগামী শনিবার বার্লিনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফুটবলের ফাইনালের আগে উয়েফার জরুরী বৈঠকও আহ্বান করা হয়। যেখানে দৃশ্যত ফুটবল বিশ্ব দু’ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। মূলতঃ ইউরোপের এমন হুমকির পরই সংবাদ সম্মেলন ডেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন ব্ল্যাটার।

সংবাদ সম্মেলনে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিতে এসে ব্ল্যাটার বলেন, ‘নির্বাচিত হলেও একটা অংশের সমর্থন আমি পাইনি। ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থেই তাই সরে দাঁড়াচ্ছি। ফিফার স্বার্থই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংগঠন হিসেবে ফিফা এবং বিশ্বজুড়ে ফুটবলই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘জীবনের ৪০টা বছর ফিফায় কাটানোর সময়টা নিয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা করেছি। ফিফাকে আমি যেকোনো কিছুর চাইতে বেশি ভালোবাসি। আমি এর ভালোই চাই। ফুটবলের ভালোর জন্যই আমি আরেক মেয়াদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু সবাই আমাকে সমর্থন দেয়নি।’

এখানে সবাই বলতে ইউরোপকেই যে বুঝিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ফুটবলের সবচেয়ে শক্তিশালি মহাদেশ তারা। ভোটের সংখ্যা কম হলেও অর্থ-বিত্তে তারাই যে শক্তিশালি-এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্নীতির দায়ে যখন ফিফা টালমাটাল, তখন তারা পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোন সাড়া দেননি ব্ল্যাটার।

এরপরই নড়ে বসে ইউরোপ। মঙ্গলবার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট খবর প্রকাশ করে, বিকল্প বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে ইউরোপ। তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য লাতিন আমেরিকাকেও আহ্বান জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে উয়েফা। এ খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন ব্ল্যাটার।

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে ব্ল্যাটার নিজেও স্বীকার করেছেন, ফিফায় আমূল সংস্কার দরকার এবং তা করতে হবে সবাই মিলে। ব্ল্যাটার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ফিফার দুর্নীতির মূলে আছে নির্বাহী কমিটির বিপুল ক্ষমতা। তিনি বলেন, ‘এই কমিটির ক্ষমতা ও আকার কমিয়ে আনতে হবে। শুধু ফিফা সভাপতি নয়, নির্বাহী কমিটির সদস্যদেরও নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে ফিফায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।’

২০১৬ সালের ১৩ মে মেক্সিকোতে পরবর্তী ফিফা কংগ্রেস হওয়ার কথা। কিন্তু ব্ল্যাটার চান, এর আগেই যত দ্রুত সম্ভব একটি জরুরি কংগ্রেস ডাকতে। আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে যে কোনো এক সময় সেই কংগ্রেসটি আয়োজন করা হবে। সেই কংগ্রেসেই নির্বাচিত হবে নতুন ফিফা সভাপতি।

১৯৯৮ সালে ফিফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন সেপ ব্ল্যাটার। এরপর চারবার ফিফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি এবং টানা ১৭ বছর বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর অবশেষে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন ৭৯ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ।

১৯৭৫ সালে হোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ ফিফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময়ই সংস্থাটিতে চাকুরিজীবী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ব্ল্যাটার। ২৪ বছর ফিফা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন হ্যাভেলাঞ্জ, জুলে রিমের পর যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। হ্যাভেলাঞ্জের উত্তরসূরি হিসেবে ১৯৯৮ সালে ফিফা প্রধান হন ব্ল্যাটার।

(ওএস/এএস/জুন ০৩, ২০১৫)