স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের জন্য ঋণসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী এ বছর তারা কৃষিঋণসহ মোট ৬ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, যেখানে সব ব্যাংক প্রতিবছর বিপুল মুনাফা করছে সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকগুলো আছে মুনাফাহীন। তাছাড়া, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে তাদের ঋণ সমন্বয় করে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকগুলোর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত এ চারটি ব্যাংকের (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী) পৃথক পৃথক ঋণসীমা বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সূত্র জানিয়েছে, গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য যে ঋণসীমা বেঁধে দিয়েছিল তার মধ্যে একমাত্র রূপালী ব্যাংক তাদের সীমা অতিক্রম করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী গত বছর রূপালী ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা থাকলেও ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছিল প্রায় ১৪ শতাংশ হারে। ফলে ওই বছর ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকটিকে জরিমানা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত হিসেবে বিতরণ করা ঋণের টাকা আটকে রেখেছিল ব্যাংকগুলোর এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ বছর ব্যাংকটির ২০১৩ সালের ঋণের সাথে ১২ শতাংশ হারে সমন্বয় করে ঋণের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ বছর ব্যাংকটি সর্বোচ্চ ৯৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

চলতি বছর সোনালী ব্যাংকের জন্য ঋণসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। যা ২০১৩ সালে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ২২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার সাথে ৬ শতাংশ হারে সমন্বয় করা হয়েছে।

গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল ঋণের ৮ শতাংশ হারে সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছিল ব্যাংকটির। কিন্তু ব্যাংকটির ঋণের সমন্বয়ের পরিবর্তে গত বছর ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। টাকার হিসেবে যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের জন্য ২০১৩ সালের ঋণের সাথে ১০ শতাংশ হারে সমন্বয় করে ২০১৪ সালে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বছর ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করতে পারবে সর্বোচ্চ এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।

গত বছরও অগ্রণী ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১০ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক ৬৩ শতাংশ হারে। ওই বছর ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। টাকার হিসাবে যার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি।

২০১৩ সালের ঋণের সাথে ১০ শতাংশ হারে সমন্বয় করে ২০১৪ সালের ঋণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে জনতা ব্যাংকের। এ বছর ব্যাংকটি সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারবে বলে অনুমতি পেয়েছে।

গত বছর ব্যাংকটির জন্য এ বছরের মতো একই প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু ব্যাংকটি তাদের নির্ধারিত প্রবৃদ্ধির মাত্র এক দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জন করতে পেরেছে। ২০১৩ সালে ব্যাংকটির মোট ঋণ বিতরণ কমেছে ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। টাকার হিসাবে যার পরিমাণ ২ হাজার ৪০৫ কোটি।

(ওএস/এস/মে ১৭, ২০১৪)