।। রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ ।।

রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ঢাকায়। দু'দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হচ্ছে। যা উভয় দেশের স্বার্থ বজায় রেখে পারস্পারিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে বলে আশা প্রকাশ করছে দু'দেশের সচেতন মহল।

যা হোক, মি: মোদির বাংলাদেশ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে অনেক ব্যস্ত সময় পার করবেন। তাঁর এই সফরের আগে থেকে বিএনপি হঠাৎ করে 'ভারত প্রীতি' আচরণ শুরু করেছে যা অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। মোদির এই সফরে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের কোন কর্মসূচী ছিল না। বিএনপির পক্ষ থেকে দিল্লীতে আবেদন করলে তাও প্রত্যাখ্যান হয়। কিন্তু তারা কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত মোদির সাথে তাঁর হোটেলে হায়-হ্যালো টাইপ সাক্ষাতের অনুমতি পায়!

অপরদিকে, বিএনপি'র কোন নেতাকর্মী মোদির এই বাংলাদেশ সফর ও ভারত নিয়ে কোন কথা আপাতত বলবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমার কথা হচ্ছে, বিএনপি এবং তাদের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ করে এতো ভারত প্রীতি দেখাচ্ছেন কেন! কেন মোদির সাথে তাঁর বৈঠক হতে হবে যেখানে মোদিজির ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে সাক্ষাতের সময় দিতে চায়নি দিল্লী! আর বিএনপি তো তার জন্মলগ্ন থেকেই ভারত বিরোধী আচরণ করে আসছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে বারবার যারা ভারতের দালাল বলে গালি দিতো, তাদের মুখেই সেই ভারত প্রেম! মূলত রাজনৈতিক আচরণগত দিক থেকে বিএনপি'র মূল প্রতিপাদ্য ভারত বিরোধিতা। অথচ আজ তারা ভারত প্রীতির জোয়ারে ভাসতে চাচ্ছেন, কারণটা কি ??

এইতো কিছুদিন আগের কথা, ভারত সরকারের রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। ভারতের প্রথম বাঙ্গালী রাষ্ট্রপতি এবং আমাদের দেশের জামাই প্রণব জি'র সফরের সময় আপনি (খালেদা জিয়া) তার-আপনার পূর্ব ঘোষিত বৈঠক বাতিল করে তাঁকে অপমান করছিলেন। আর যার কারণ দেখিয়েছিলেন আপনারই দেয়া হরতাল-অবরোধে আপনার নিরাপত্তাজনিত একটা ভ্রান্ত ইস্যূকে! ভারত রাষ্ট্রপতি যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন সেই আবাসিক হোটেলের বাইরের রাস্তায় আপনার দলের নেতা-কর্মী বোমা-ককটেল ফুটিয়ে আতংক সৃষ্টি করে বিশ্ব মিডিয়ায় আমাদের ছোট করেছিল। প্রণব জি'র সাথে সাথে সেদিন আপনি অসম্মান করেছিলেন বাংলাদেশকে, অসম্মান করেছিলেন দেশের জনগণ ও সরকারকে, অসম্মান করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধুপ্রতিম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে এবং সর্বোপরি আপনি নিজেকেও সেদিন অসম্মান করেছিলেন, যা আপনি এতদিনে অনুধাবন করতে পেরেছেন কিনা জানিনা!

আর আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে আপনার বৈঠকের সময় না থাকায় আপনি ও আপনার দল হতাশ হন! দিল্লী আপনাদের আবেদন বাতিল করলে কষ্ট পান কেন? কেন আপনার-তাঁর(নরেন্দ্র মোদি) সাথে দেখা করতেই হবে? কারণ কি?? কি কথা তাহার সাথে???

সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ভারতের সাথে যে সব চুক্তি এখন করছেন বা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, সেগুলোর অধিকাংশই মূলত স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যকার চুক্তি। যা ওই সময় ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে খ্যাত ছিল। চুক্তিগুলো অধিকাংশই জাতির জনক শেখ মুজিবের পক্ষেই ছিল অর্থাৎ চুক্তিগুলোতে আমাদের দেশের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছিল। আজ দুঃখ আর লজ্জার সহিত বলতে হয়, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর ওই চুক্তির বাস্তবায়ন বেহেস্তে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরবর্তী সরকার গুলো অর্থাৎ জিয়াউর রহমান, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া এরা কেউ দেশের এই চুক্তিগুলোকে সফল করার চেষ্টা করে নাই। বরং তারা সকলেই জাতির পিতার করে যাওয়া ঐতিহাসিক ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিকে জাতির কাছে মুজিবের 'গোলামী চুক্তি' নামে তুলে ধরেছে এতো বছর। যারা ওই চুক্তিকে গোলামী চুক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল তারা মা'র থেকে মাসি'র দরদ দেখিয়ে তখন পার পেলেও এই যুগে আর পার পাবে বলে মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুত্যাগের বিনিময়ে গড়েছিলেন তাঁর এই সোনার বাংলাদেশ। বহু স্বপ্ন ছিল এই দেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর। তাইতো তাঁকে মেরে তাঁর দেশের বারোটা বাজানোর চেষ্টা আজও অব্যাহত রেখেছে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি!

ভারত বিদ্বেষী খালেদা জিয়া ও বিএনপি এতো বছর ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিকে গোলামী চুক্তি বলে গলা ফাটিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করলেও আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা চুক্তিগুলোকে এক এক করে বাস্তবায়ন করে, দেশের উন্নয়নের অভূতপূর্ব সাফল্য করে দেশের জনগণকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কারা দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, আর কারা দেয় না।

যাই হোক, আগের প্রশ্নে ফিরে আসি। খালেদা জিয়া ও বিএনপি'র হঠাৎ কেন এতো ভারত প্রীতি ?

এটা কি বিএনপি'র নতুন কোন ষড়যন্ত্র ? নাকি খালেদা জিয়া নতুন কোন রাজনৈতিক খেলা খেললেন তা বোঝা মুশকিল! তবে এইটুকু বুঝতে পারছি সরকারকে তার দিকে কড়া নজর রাখতে হবে যেন তিনি নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারেন, যা দেশের স্বার্থকে বিনষ্ট করবে।

আর যাই হোক মোদির সাথে শেষ সময়ে সাক্ষাৎ হবে জেনে এইটুকু অন্তত বোঝা যাচ্ছে, এই সাক্ষাৎ কেবল নিয়ম রক্ষা ছাড়া আর কিছুই না!

বাংলাদেশ-ভারত সকল চুক্তির সফল বাস্তবায়ন হোক। দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাঁর সুদৃঢ় রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে দেশ এবং দেশের মানুষের উন্নয়নের পথকে আরও সুগম করুক। অটুক থাকুক ভারত-বাংলাদেশ বন্ধন।

(আরআই/অ/জুন ০৬, ২০১৫)