কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : সূর্যাস্ত শেষে চারিদিক যখন অন্ধকারে ঢেকে গেল ঠিক তখনই হাজারো মানুষের চোখের জলে মাটির অন্ধকার ঘরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো শারমিন।

মা-বাবা ও ভাইদের বুকফাটা আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে কাঁদল গোটা এলাকার মানুষ ও তার সহপাঠীরা। কিন্তু যে প্রেমিকের হাত ধরে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে মৃত্যুকে বেছে নিলো, সেই প্রতারক জাকারিয়া কিংবা তার পরিবারের কাউকেই দেখা যায়নি শারমিনের কফিন যাত্রা ও জানাজায়।

রবিবার সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন হয় তার। কিন্তু জানাজায় উপস্থিত শতশত মানুষের আর্তি, কোন দোষ না করেও যাকে মাত্র কয়েক লাখ টাকা দেনমোহর দিতে না পারায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করতে হলো সেই প্রেমিক ও তার পরিবার কি কোন শাস্তি পাবে না।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চাকামইয়া গ্রামের মজিবর হাওলাদারের মেয়ে শারমিন আক্তার রবিবার সকালে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। দীর্ঘ দুই বছরের প্রেম সহপাঠী একই এলাকার ক্বারী রুহুল আমিনের ছেলে জাকারিয়ার সাথে। তারা দু’জনই এ বছর তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, পরীক্ষা শেষে দু’জনের হাত এক করে দিতে শারমিনের পিতা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে জাকারিয়ার পরিবারের কাছে যায়। প্রথমে রাজি না হলেও পরে জাকারিয়ার পিতা নগদ দুই লাখ টাকা ও ৫/৬ ভরি স্বর্নালংকার দাবি করে। কিন্তু শারমিনের দরিদ্র পিতার কাছে তা দেয়া ছিলো অসম্ভব। শারমিন ও তার পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে এলাকা ছেড়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় যায় জাকারিয়া। মোবাইলে সেখান থেকে প্রতারক জাকারিয়া ঠিকই বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারমিনের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক বজায় রাখে। পরিবারের লোকজন তার জন্য মেয়ে ঠিক করলে মুহূর্তের মধ্যেই জাকারিয়া শেষ করে দেয় তাদের দু’বছরের প্রেমের সম্পর্ক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার রাতে শারমিনের সাথে মোবাইলে জাকারিয়ার প্রচন্ড ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে শারমিনকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে এবং তার জীবনে অন্য মেয়ে এসেছে জানালে ক্ষোভে ও অভিমানে রবিবার সকালে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করে প্রতারক প্রেমিককে চিরমুক্তি দেয় সে।

শারমিনের পিতা মজিবর হাওলাদার বলেন, স্বপ্ন আছিলো মাইয়াডারে ল্যাহাপড়া করামু। কিন্তু কি হইয়া গ্যালো। আমার মাইয়া মরতে পারে না। তারে মরতে বাধ্য করছে। আমরা বিয়ার প্রস্তাব লইয়া গ্যাছিলাম। হেই সময় বিয়া হইওলে আইজ মাইয়াডারে গলায় দড়ি দিয়া ঝুলতে হইতো না।

শারমিনের সহপাঠীরা জানায়, ক্লাস এইট থেকে শারমিনকে উত্যক্ত করতো জাকারিয়া। একপর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিন্তু জাকারিয়া যে এইভাবে প্রতারণা করবে তা তারাও বুঝতে পারেনি। তারা শারমিনের মৃত্যুর জন্য জাকারিয়া ও তারা পরিবারের শাস্তি দাবি করেন।

স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসী বলেন, শারমিন আত্মহত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে না পারলে এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে বৃহৎ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে যাতে এলাকার কোন মেয়েকে এইভাবে প্রতারণার স্বীকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে না হয়।

জাকারিয়ার পিতা ক্বারী রুহুল আমিন সাংবাদিকদের কাছে দেনমোহর এবং তার ছেলে ও শারমিনের সম্পর্ক ছিলো তা অস্বীকার করেন।

কলাপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, শারমিন মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে জানান।

(এমকেআর/পিএস/জুন ০৮, ২০১৫)