কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের ঠেলাগাড়ি চালক কালু মিয়া, হাতেম আলী, তফেল, রাশেদুল, আব্দুল্লাহ, গিয়াস, নুরুদ্দিন, কেরামত, মক্কেল, কাশেম, ইরাজ, শহিদুল্লাহ, বারী, সানাউল্লাহসহ আরো অনেকে। সকলের বয়স ৬০ এর কাছাকাছি।

আজ রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়ি থেকে ২ মাইল পায়ে হেটে নদী পার হয়ে শহরের থানা মোড়ে পৌছাতে তাদের সময় লেগেছে এক ঘন্টার বেশি। মাঝে কয়েকবার রেষ্ট নিতে হয়েছে। এর মধ্যে পুরো গা ঘেমে ভিজে গেছে শরীরের কাপড়গুলো। তাদের ভাষায় জীবনের এত সময় পার করে দিয়েছি এত গরম কখন দেখি নাই। এমন কষ্ট আর দুর্ভোগের কথা সকলের মুখে মুখে। আর রৌদ্র উঠার পর থেকেই সূর্যের তাপ ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় মানুষজনের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
গত ২০ দিনে কোন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কুষ্টিয়া জেলার সর্বত্র একই পরিবেশ বিরাজ করছে। এলাকার কৃষি কাজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বোরো ধান কাটা আর আউশ ধান লাগানোর শ্রমিক না পেয়ে কৃষকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
আবার যারা আউশ ধান রোপন করেছে সেসব ধান পানির অভাবে পুড়ে যাচ্ছে। এই তাপদহে জেলার নদীকুলবর্তি এলাকার মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এবং কষ্টে জীবন যাপন করছে বলে সরেজমিনে দেখা গেছে। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী ও গড়াই নদী শুকিয়ে গেছে। পদ্মা ও গড়াই নদীতে শুধুই ধুধু বালু। গড়াই নদী পায়ে হেটে পার হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। এই রৌদ্রের প্রচন্ড তাপদহ সহ্য করেই শহরের কাছে হরিপুর ও কয়া ইউনিয়নের এলাকার হাজার হাজার মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে পায়ে হেটে পার হয়ে কুষ্টিয়া শহরে আসছে প্রতিদিন। প্রখর রৌদ্রের তাপে গাছের পাতার রং পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নদী এলাকার খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ায় পানি উঠছে না। যেখানে একটি টিউবওয়েল সচল আছে সেখানেই মানুষজনের পানির জন্য লাইন দিতে দেখা যাচ্ছে।
জেলার ভেড়ামারা এবং দৌলতপুর এলাকার বড় একটি অংশ পদ্মা নদী বয়ে গেছে। প্রমত্তা পদ্মা নদী শুকিয়ে খাল হয়ে গেছে। চর এলাকায় মরুভূমির মত পরিবেশে কষ্টে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। চরে উত্তপ্ত বালুর উপর দিয়ে পায়ে হেটে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে যেয়ে অধিকাংশ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দৌলতপুর চর এলাকার মানুষেরা জানান-রাতেও বালু রাস্তা উত্তপ্ত থাকায় মানুষেরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। প্রখর রৌদ্র আর তাপদহে জনজীবন অতিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তীব্র লোড শেডিংয়ের কারনে মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দিন মজুর, শ্রমিক আর রিকসা চালকেরা এই রৌদ্রের মধ্যে কাজ করতে পারছে না। দিনে কোন গাছ বা বাড়ির ছায়াকে নিরাপদ জায়গা হিসেব বেছে নিচ্ছে মানুষজনেরা। রৌদ্রে এবং গরমের কারনে মানুষেরা ঘরে থাকতে পারছে না।
শহর এবং গ্রামের অনেক স্থানে মানুষেরা ঘরে না ঘুমিয়ে খোলা আকাশে অথবা ছাদে ঘুমাচ্ছে। এই এলাকায় গত ২০দিন আগে বৃষ্টিপাত হয়েছিল তার পর থেকে আর কোন মেঘ বা বৃষ্টির দেখা মিলেনি। তবে মাঝে মাঝে বাতাস লক্ষ্য করা গেলেও বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মুহুর্তের মধ্যে ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। এদিকে হাসপাতাল গুলোতে গরমজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশু এবং বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। হিটষ্টোকে অনেক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে গত কয়েক দিন রোগীর চাপ খুব বেশি। রোগীর চাপ সামলাতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই গরমে বেশি কষ্টে আছে কৃষক এবং দিন মজুরীরা। খোলা আকাশের নিচের কোন কাজে যাচ্ছে না দিনমজুর ও শ্রমিকেরা। যারা মাঠে কাজ করছে তারা খুব ভোরে আর বিকেলে কাজ করে বাড়ি ফিরছে আবার অনেক স্থানে সন্ধ্যার পরেও মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। শহরের যেখানেই ছায়া অথবা গাছ সেখানেই মানুষজনেরা একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আবার মোড়ে মোড়ে শরবতের ফেরিওয়ালাদের কদর বেড়েছে। বরফের পানি দিয়ে লেবুর শরবত আর আইসক্রিম ওয়ালাদের বেচা বিক্রি ভাল হচ্ছে।
তবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডাঃ ইফতেখার মাহমুদ জানান, এই সব জিনিসগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া ভাল কেননা খোলা আকাশের এসব খাবার খেয়েই মানুষজনেরা বেশি অসুস্থ পয়ে পড়ছে আর বরফে যে কোন জীবানু দীর্ঘ সময় স্থায়ীত্ব থাকে। প্রচন্ড এই গরমে ক্ষুধামন্দা, পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, চিকেন পক্স বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নিকট এসব রোগী বেশি আসছে। প্রফেসর ইফতেখার মাহমুদ জানান, এই গরমে বেশি পরিমান পানি, লেুব শরবত, বেলের শরবত এবং ওর স্যালাইন খাওয়া ভাল।
(কেকে/এএস/মে ১৮, ২০১৪)