নাটোর প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম কেনার লক্ষমাত্রা নিয়ে আম সংগ্রহ ও পাল্পিং কার্যক্রম শুরু করেছে দেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ। ২৫মে থেকে শুরু করে আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত স্থানীয় আমচাষীদের কাছে থেকে আম ক্রয় করবে প্রতিষ্ঠানটি  প্রায় ১০০ কোটি টাকার । এই কার্যক্রমে প্রায় ১৩ হাজার চুক্তিবদ্ধ চাষী আম সরবরাহ করবে।

রবিবার দুপুরে নাটোরের একডালায় প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের কারখানায় স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যাজোর এস এম সারোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার আল মাসুদ, বিজনেস লিমিটেডের কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বিভাগের ম্যানেজার কামরুজ্জামান, হেড অব মিডিয়া সুজন মাহমুদ, মিডিয়া ম্যানেজার জিয়াউল হক জিয়া প্রমুখ।
কারখানার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এস এম সারোয়ার হোসেন আরো জানান, নাটোরে প্রাণ-এর কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার কারণে কারখানায় সরাসরি প্রায় ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমের মৌসুমে বাড়তি আরো দুই থেকে তিন হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এসব শ্রমিকের প্রায় ৯০ ভাগ নারী শ্রমিক। এছাড়াও কারখানায় আমচাষী ও সরবরাহকারীদের প্রতিষ্ঠানে পরোক্ষ কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়। আম বহন, লোড-আনলোড, আম রাখার জন্যে শেড নির্মাণ, ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন কাজের জন্য স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই কর্মসংস্থানের ফলে অত্র অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসময় প্রাণ এগ্রো লিমিটেডের কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার আল মাসুদ জানান, কারখানাতে আম নেয়ার সময় কয়েকটি ধাপে আমগুলিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাছাই করা হয়। কারখানার ভেতরে শেডে আম নেয়ার পর কোয়ালিটি কন্ট্রোলারগণ প্রাথমিকভাবে আমগুলি পাকা, রোগমুক্ত এবং পঁচা কী না তা পরীক্ষা করে দেখেন। পাশাপাশি আমের আকারও দেখা হয়। এরপর আমগুলি ওজন করে পাঠানো হয় প্রোডাকশন ফ্লোরে। এ পর্যায়ে আমগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে নিজস্ব কোয়ালিটি কন্ট্রোল (কিউসি) ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। ল্যাবে ফরমালিন, ব্রিক্স, পি-এইচ টেস্টসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য টেস্ট সম্পন্ন করে কেবল ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ হলেই সে আমগুলিকে প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়। এরপর আমের বোটা কেটে ফেলে এবং পুনরায় বাছাই করে প্রসেসিং কনভেয়ারে ছেড়ে দেয়া হয়। সেখানে আমগুলি ঠান্ডা এবং গরম পানিতে ধৌত হয়ে একটি প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করানো হয় যেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে আমের খোসা ও আমের বিচি আলাদা হয়ে বের হয়ে আসে। আর অন্য প্রান্ত থেকে বেরিয়ে আসে আমের পাল্প বা মন্ড। উৎপাদিত মন্ডগুলি পাস্তুরিত করে জীবানুমুক্ত করার পর সংরক্ষণ করা হয়। এই পাল্প থেকে প্রাণ এর বিভিন্ন ম্যাংগো ড্রিংক, ম্যাংগো বার ও জেলিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হয়। প্রাণ এর এসব পণ্য এখন বিশ্বের ১১৪টি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বিভাগের ম্যানেজার কামরুজ্জামান জানান, প্রাণ-এর প্রায় ৭৮ হাজার চুক্তিবদ্ধ চাষী রয়েছে যার মধ্যে ১৩ হাজার চুক্তিবদ্ধ আমচাষী। প্রাণ এর কৃষি হাবের মাধ্যমে এসব আমচাষীদের সারাবছর বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়। স্বল্পমূল্যে উন্নতজাতের চারা প্রদান, সার, কীটনাশক ব্যবহার এবং রোপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। এসব কাজ সম্পন্ন করার জন্যে প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের রয়েছে বেশকিছু অভিজ্ঞ ফিল্ড সুপারভাইজার। যারা প্রতিনিয়ত নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা এবং দিনাজপুর এলাকায় প্রাণ-এর চুক্তিবদ্ধ আমচাষীদের আমচাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে থাকেন।
(এমআর/পিবি/জুন ১৪,২০১৫)