শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নকলা উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকগাঁও স্থলবন্দর পর্যন্ত দুই লেন সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দুই লেন সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহনের সংবাদে বেশী টাকা পাওয়ার লোভে নকলা-নালিতাবাড়ী পুরণো রাস্তার দুই পাশে কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়েে গেছে। অনেকেই ক্ষেতের ধান না কেটে সেখানেই পাকা দালান এবং টিনের ঘর তুলছেন।

নকলা উপজেলার ছাত্রকোনা, ধনাকুশা এলাকা থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার তালতলা এলাকা পর্যন্ত এ প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে ওইসব এলাকার সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা প্রায় অর্ধশতাধক কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নকলা-নাকুগাঁও ২৯.৫ কিলোমিটার দুই লেন সড়ক প্রকল্পের উন্নয়ন ও জমি অধিগ্রহনের লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২৩৯ কোটি টাক বরাদ্দ করেছে। ইতোমধ্যে নকলা থেকে ছত্রকোনা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের জন্য ১১২ একর জমি অধিগ্রহণ করে রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়। শিগগিরই পরবর্তী জমির অধিগ্রহনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু সম্প্রতি রাস্তার উভয়পাশে রাতারাতি ভুমির মালিকরা পাকা দালান নির্মাণ করছেন। সূত্র মতে, সরকার জমি অধিগ্রহন করলে জমির পাশাপাশি বসতবাড়ি ও প্রতিটি ঘরের জন্য আলাদা দাম ধরে ক্ষতিপুরণ দিয়ে থাকে। প্রতি শতাংশ জমি অধিগ্রহনে জন্য নিচু ও ধানি জমির জন্য ১২ হাজার টাকা, উচু ও ভিটি জমির জন্য ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা, টিনের ঘরের জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার, পাকা (বিল্ডিং) ঘরের জন্য ৮০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ধরা হয়েছে।
সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, নকলার ছত্রকোনা থেকে নালিতাবাড়ীর বাটিকামারী পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের জমি এখনো অধিগ্রহন করা হয়নি। এসব জমির জন্য ক্ষতিপুরন বেশি পাওয়ার আশায় দু-সপ্তাহের ব্যবধানে সড়কের দু’পাশে কাঁচা-পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসাব কষে জমির মালিকেরা বেশি টাকা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছেন। ইতোমধ্যে এলাকায় এমন কথাও ছড়িয়ে পড়েছে, জমি অধিগ্রহনের জন্য ভুমি অফিসের লোকজনদের ঘুষ দিলে ক্ষতিপূরণের পরিমানও বেশী পাওয়া যায়। জমির দাম সরকার যা নির্ধারণ করেছে সেটা বাড়ানোর সুযোগ নাই, কিন্তু যদি ঘরবাড়ী বেশী থাকে, পাকা হয়, তাহলে ক্ষতিপূরণের পরিমানও বাড়ে।
গত শুক্রবার দুপুরে ছত্রকোনা এলাকায় গিয়ে কথা আহাম্মদ আলীর স্ত্রী নবিছা বেগমের সাথে। তিনি রাস্তার পাশে ক্ষেতের ধান কেটে প্রায় ৬০ হাত লম্বা পাকা দালান ঘর নির্মাণ কাজের তদারক করছিলেন। তিনি জানান, সরকার আস্তার জইন্য জমি নিবো ঠিক আছে, দিমু। কিন্তু আমগরেতো অহনও কোন নোটিশ দেয় নাই, খুঁটি গাড়ে নাই। কিছুদিন আগে ভুমি অফিসের লোকজন আইয়া খালি কইছে, জমিনের খারিজ-টারিজ করে। আমরাতো আমগর নিজের জমিত ঘর তুলতাছি। সরকারের জমিততো যাই নাই।
নালিতাবাড়ীর তালুকপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী আনোয়ার হোসেনের একটি পুরণো মাটির ঘরের পাশে প্রায় ২০ হাত লম্বা নতুন একটি হাফবিল্ডিং ঘর তুলেছেন। তিনি বলেন, সরকারতো রাস্তার জন্য জমি নিবো, কোন মাইকিং করলোনা, নোটিশ দিলোনা, আমরা কিবাই বুঝমু। অহন নিজের জমিতেই পাক্কা ঘর তুলছি। সরকার জাগাজমি-ঘরবাড়ীর ক্ষতিপূরণ দিয়া নিলে নিবো, দিমু। সরকারেতো আর মাগনা নিবোনা। হঠাৎ করে পাকা ঘর তুললেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থাকার ঘরটা বালা না, নরম অইয়া গেছে, তাই নতুন ঘর তুললাম। জুলফিকার আলী নামে এক ব্যাক্তি জানায়, সরকার জমির যে দাম নির্ধারন করছে, এর বাইরে যাওয়নের কোন সুযোগ নাই। তাই ক্ষতিপুরন বেশি পাওয়ার আশায় সবাই ঘর তোলতাছে। আমরাও তুলছি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শোয়েব আহমেদ জানিয়েছেন, দুইলেন প্রকল্পের জন্য জমি নির্ধারনের সময় একটি জরিপ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই জমি অধিগ্রহন করা হবে। সড়কের রোড ম্যাপ, ভিডিও চিত্র আমাদের আছে। ভুমির মালিকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আবাসন নির্মাণ করলেও আমরা নতুন করে তাদের বাড়তি ক্ষতিপূরণের টাকা দেবো না। অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা তাদের টাকা তুলতে পারবেন।
শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো.হানিফ উদ্দিন বলেন, খুব শ্রীঘ্রই ছত্রকোনা থেকে বাটিকামারি পর্যন্ত জমি অধিগ্রহন করা হবে। বাড়তি ক্ষতিপুরনের আশায় সড়কের দু-পাশে ঘর তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ঘর তুলতে তাদের নিষেধ করাও হয়েছে। জায়গা নির্ধারণের সময় জমি ভিডিও করা হয়েছে। সেই ফুটেজ দেখেই জমি অধিগ্রহন করা হবে। তবে জমি অধিগ্রহনের জন্য ভুমি অফিসে ঘুষের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
(এইচবি/এএস/মে ১৮, ২০১৪)