মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের মৃত মামলত হোসেনের বড় ছেলে মাসুম পারভজ । যাদুখালী স্কুল এন্ড কলেজে থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। আর পাঁচটা সাধারণ ছেলে মেয়ের মত রুটিন সাজিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি মাসুম পারভেজের। বাবা কি জিনিস বুঝে ওঠার আগেই বাবা হারা হয়েছে মাসুম। ২০০০ সালে পেটের পিড়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা মামলত হোসেন।

মা সেরেজান খাতুন তার নানার সহযোগিতায় মাসুম ও তার ছোটভাইকে মানুষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাধ্যমিকে পড়া শুরু করার পর থেকে মাসুম নিজেই ধরে সংসারের হাল। পিতার রেখে যাওয়া মাত্র দেড় বিঘা জমিই তাদের সম্বল। পৈতিক মাত্র দেড় বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে এবং পরের জমিতে দিনমুজরের কাজ করে সংসার চালিয়ে যা বেচেঁছে তাই দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে এসএসসি-২০১৫ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাসুম পারভেজ। দৈনতা বা অভাব মাসুমকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি। এর আগে ২০০৯ সালে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছিলো। কিন্তু মাধ্যমিকে উঠে সংসারের বোঝা সামলিয়ে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার অল্পের জন্য জিপিএ-৫ তার জোটেনা। এএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে তাকে বিজ্ঞান বিভাগ বাদ দিয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে মানবিক বিভাগে।
তারপরও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে কিনা সে সংশয় তার কাটছে না। ছোট একটি ভাই সেও পড়ে ৭ম শ্রেণিতে। তার ইচ্ছে ভালো ভাবে লেখাপড়া শিখে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তার মত গরিব শিক্ষার্থীদের সেবা করা। তার সেই আশা পূরণ করতে হলে সমাজের বিত্ত মনের মানুষের সহযোগিতা দরকার। এমন কেউ কি নেই? যে তার সেই স্বপ্ন মিটিয়ে তাকে একজন আলোকিত মানুষ হিসাবে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে দিতে পারে? একজন আলোকিত শিক্ষক হিসাবে গরিব মেধাবীদের পাশে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে।
মাসুম পারভেজ জানায়, শিক্ষকদের মানুষ সম্মান করে। তাই তার ইচ্ছা শিক্ষক হয়ে গরীব মেধাবী ছেলেদের শিক্ষার জ্ঞান দেয়া। সে বলে, বাবা না থাকায় এবং গরিব সংসারের বড় ছেলে হওয়ায় খেয়ে না খেয়ে পরের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে লেখাপড়া করেছি। এত কিছুর পরও সে তার কয়েকজন শিক্ষকের অবদানের কথা অস্বীকার করেনি। সে বলে, শিক্ষকরা তাকে সহযোগিতা না করলে হয়তো তার জিপিএ-৫ হতো না। কারো করুণা নয় বিত্ত মনের মানুষদের সহযোগিতা চাই সে। যাতে লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
যাদুখালী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান টিপু, বাবা হারা সন্তান মাসুমের সহযোগিতায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
(ইএম/পিবি/জুন ১৬,২০১৫)