নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামে অবৈধ অটোভ্যান সমিতি গড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি করলেও সেদিকে দেখার কেউ নেই। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছেনা। থানা পুলিশ বলছে, মৌখিক নয়, লিখিত অভিযোগ পেলে অবৈধ অটোভ্যান সমিতি ও চাঁদাবাজি বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আনোয়ার ইমাম জানান, ব্যাটারি চালিত অটোভ্যন চলাচলে সরকার কোনো প্রকারে বৈধতা দেয়নি। রেজিষ্ট্রেশন বিহীন অবৈধ অটোভ্যান সমিতি গড়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি ভুক্তভোগীরা মৌখিকভাবে আমাদের অবহিত করেছে। খুব শিগগির অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারিভাবে কোনো বৈধতা না থাকলেও ব্যাটারি চালিত অটোভ্যানের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রেজিষ্ট্রেশন বিহীন সমিতি গড়ে কতিপয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধ অটোভ্যান নিয়ন্ত্রন করে চলেছে।

নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে রাস্তার উপর যেখানে সেখানে অটোভ্যান দাঁড়িয়ে থাকার কারণে সীমাহীন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অটোভ্যানের নিয়ন্ত্রনহীন চলাচলের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভা এলাকার প্রানকেন্দ্র স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ডে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান। সড়ক-মহাসড়কের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগেই আছে।

এর মাঝে সড়কের উপরেই অটোভ্যান দাড় করিয়ে চাঁদা আদায় করছে কতিপয় ব্যক্তিরা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ভ্যান চালিয়ে কষ্টার্জিত টাকা থেকে প্রতিদিন ভ্যানপ্রতি ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় টানাটানি, হাতাহাতিসহ মারপিটের ঘটনা ঘটছে অহরহ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভ্যান চালকরা জানিয়েছে, আগের দিনে পায়ে পেডেলযুক্ত ভ্যানগাড়ী চালিয়ে অনেক কষ্টে সংসারের খরচ পুষিয়ে যেতো। অটোভ্যান এসে কষ্ট কিছুটা কমেছিল। অটোভ্যান বিদ্যুতের চার্জে চলে। এতে তেমন কোনো বাড়তি খরচ নেই।

হঠাৎ কতিপয় কিছু মাদকসেবী ব্যক্তিরা জোরপূর্বক অটোভ্যানগুলো বিনামূল্যে ভর্তি করার নামে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন নেমপ্লেট লাগিয়ে দেয়। দু-দিন যেতে না যেতেই ৩০০ টাকা চাঁদা। এটা নাকি 'ভর্তি ফি'! টাকা না দিলে পুলিশ এসে ভ্যান গাড়ী আটক করে থানায় নিয়ে যাবে। এই ভয়ে অনেকেই টাকা দিচ্ছেন। শুধু ভর্তির টাকা নয়, প্রতিদিন বাড়ী থেকে অটোভ্যান নিয়ে স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ডে আসলেই ভ্যানপ্রতি ১০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। প্রতিবাদ করলে ফ্রি চড়-থাপ্পর খেতে হয়। বিষয়টি ভ্যান চালকারা বিভিন্ন মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কাঠের ফ্রেমে ব্যাটারি চালিত মোটর, হাতে সাধারণ ব্রেক আর পিকআপ ও চিকন এক্সেল দিয়ে তৈরী অটোভ্যান। কাঠের ফ্রেমের বগিতে বসে যাত্রী নিয়ে সজোরে চালিয়ে যাচ্ছেন চালক। হঠাৎ ব্রেকে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। তারপরেও সড়ক মহাসড়কের মাঝপথ দিয়ে চলাচল করছে অনুমোদনহীন অটোভ্যান।

এই যান চলাচলে সরকার বৈধতা দেয়নি। তবুও সীমাহীন গতিতে বেড়েই চলেছে অটোভ্যানের সংখ্যা। স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ডসহ উপজেলাজুড়ে অনুমোদনহীন প্রায় ৫শ’ টির বেশী অটোভ্যানের কারণে রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা।

ইতোপূর্বে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা ও পৌর শহরের ছোট বড় রাস্তায় পায়ের পেডেলযুক্ত ভ্যান গাড়ী চলাচল করতো। ২০১৫ সালে হঠাৎ করে পাল্টে যায় চিত্র। ব্যাটারি চালিত ছোট মোটর ও পিকআপের সাথে যুক্ত হয় ভ্যান। মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানে পুরো উপজেলা ও পৌর শহর অটোভ্যানে ছেয়ে গেছে।

ক্ষুদ্র ভ্যান হলেও সিএনজি ও অটোরিক্সার মতো সজোরে চালানো হচ্ছে এই যান। চালকরা খেয়াল খুশিমত অটোভ্যান চালাচ্ছেন। সাধারণ হাত ব্রেকের মাধ্যমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে অটোভ্যান চলাচল করছে।

অটোভ্যানে বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে হয়। অভিজ্ঞরা বলছেন, অটোভ্যানে বৈদ্যুতিক চার্জের ফলে এই উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে।

এ যান চলাচলে সরকার বৈধতা দেয়নি। তাই নন্দীগ্রামে অবৈধ অটোভ্যান ও রেজিষ্ট্রেশন বিহীন নামধারি অবৈধ অটোভ্যান সমিতির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

(এমএনআই/পিএস/জুন ১৯, ২০১৫)