নাটোর প্রতিনিধি : দেশের সেরা ফল চাষী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন নাটোরের আতিকুর রহমান। জাতীয় পর্যায়ে ফলদ বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যায় কৃতিত্ব প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে কৃষি মন্ত্রণালয়।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশের ৫ জন ব্যক্তিকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে আতিকুর রহমান প্রথম স্থান অর্জন করেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আ.কা.মু গিয়াস উদ্দিন মিল্কী অডিটোরিয়ামে জাতীয় ফল মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে আতিকুর রহমানকে পুরস্কার বাবদ একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ এ জেড এম মমতাজুল করিমের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় অতিরিক্ত কৃষি সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) আনোয়ার ফারুকসহ কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, নলডাঙ্গা উপজেলার সেনভাগ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমান ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করার পর কাজ না পেয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ান। ডেন্টাল কোর্স শেষ করেও কোন কাজ জোটেনা তার। ইত্যবসরে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদন দেখে চাষাবাদে অনুপ্রানিত ও উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেন।

২০০৯ সালে ১২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি ৬২ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় দুই লাখ টাকা। তার বাগানের পেয়ারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজার দখল করে নিয়েছে। তার পেয়ারা বাগানে কাজ করে এখন অনেকেই সাবলম্বী হয়েছে। এছাড়া স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেরাও এই বাগানে শ্রম দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে আতিক সবার বড়। দুই বোনের এক বোনকে অনেক আগেই বিয়ে দিয়েছেন। ছোট বোন আরিফা বাগাতিপাড়ার তমালতলা কৃষি কলেজ থেকে কৃষি ডিপ্লোমা পাশ করে ভাইকে এ কাজে সহযোগিতা করছে। তার এই সফলতার খবর টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে। কৃষি কাজে কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সংস্থাসহ কৃষি বিভাগ থেকে তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার ডঃ সাইফুল আলম জানান, আতিকুর রহমান শুধু নিজেকেই সমৃদ্ধ করেননি। সমৃদ্ধি করেছেন নাটোরকে। পেয়ারা চাষ করে দেশ সেরা ফল চাষী হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। সারা দেশের মানুষের কাছে এই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার মতো পেয়ারা চাষে কেউ এগিয়ে আসলে তাকেও আধুুনিক প্রযুক্তিগত সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, পেয়ারা একটি দ্রুত বর্ধনশীল গ্রীষ্মকালীন ফল। দেশের সর্বত্র কম-বেশি এ ফলের চাষ হয়। তবে থাই-৩ জাতের পেয়ারা সারা বছরই হয়। বানিজ্যিকভাবে চাষ করলে কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবেন। স্থান ভেদে একর প্রতি ফলন হয় প্রায় ২ টন। খরচ বাদে কৃষকের আয় হয় ৬০ হাজার টাকা।

ইতোমধ্যে সেনভাগ গ্রামের আতিক পেয়ারা চাষে সেই দৃষ্টান্ত রেখেছেন। তিনি পেয়ারা চাষে লাভবান হওয়ায় বাগানের পরিধি বাড়াতে আরো ৬২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চারা রোপন করেছেন। সেখানেও পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে।

(এমআর/পিএস/জুন ২০, ২০১৫)