মাদারীপুর প্রতিনিধি : কালাম মোল্যা। একজন চায়ের দোকানদার। চা বিক্রি করে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াশুনাসহ সংসারের সব খরচ যোগাড় করতে হয়। সেই একমাত্র উপার্জনের ভ্রাম্যমান চায়ের দোকান, চুলা ভেঙ্গে দেয়াসহ তাকে মারধর ও বৈদ্যুতিক সর্ট দিয়েছে মাদারীপুরের এনএসআই এর উপ-পরিচালক মো. মামুন। বর্তমানে সে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শহরের সৈয়দারবালী গ্রামের কালাম মোল্যা লেকপাড়ে চা বিক্রি করে। রবিবার রাত ৮ টার দিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. অখিল চন্দ্র তার কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে কালামের দোকানে চা খেতে যায়। চা দিতে দেরি করাকে কেন্দ্র করে ডা. অখিল চন্দ্র ও কালামের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় কালাম ঐ ডাক্তারের পা ধরে ঘটনাটির জন্য ক্ষমা চায়।

পরে ঐ দিন রাতেই ডা. অখিল চন্দ্র ও এনএসআই এর মাদারীপুরের উপ-পরিচালক মো. মামুন লোকজন নিয়ে কালামকে মারধর করতে যায়। এসময়ও কালাম ভয়ে তাদের কাছে ক্ষমা চায়। একপর্যায় তারা কালামকে লেকপাড়ে চা বিক্রি করতে নিষেধ করে। হুমকি দিয়ে আসে চা বিক্রি করলে তাকেসহ তার ছেলেদের মেরে ফেলবে।

একমাত্র উপার্জনটি বন্ধ হওয়ায় কালাম দিশেহারা হয়ে পড়ে। পরে সে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদের কাছে যায়। তার কাছ থেকে মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সে চা বিক্রি শুরু করে। এই খবর পেয়ে এনএসআই এর মাদারীপুরের উপ-পরিচালক মো. মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে কালামের চায়ের দোকানে আসে। এসময় কালামকে এনএসআই এর অফিস কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করে। এক পর্যায় তাকে বৈদ্যুতিক সর্ট দেয়া হয়। রাতে সে বাড়ি ফিরে অসুস্থ্য হয়ে পরলে পরেরদিন বুধবার সকালে তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কালাম মোল্যা কেঁদে বলেন, আমি গরীব মানুষ। সামান্য কারণে আমাকে এভাবে মারলো। জীবনে এমন মাইর কখনও খাইনি। এনএসআই এর মামুন স্যার আমাকে তার অফিসে নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখে। পরে কিসব যন্ত্রপাতি বের করে তা দিয়ে আমাকে মারে। বৈদ্যুতিক সর্ট দেয়। এসময় সে বলেন, আমি যদি এক কথা কাউকে বলি তা হলে আমাকে ও আমার ছেলেদের মেরে ফেলবে। আমি ভয়ে প্রথমে কাউকে কিছু বলিনি। আমি এর বিচার চাই।
এসময় সে ভয়ে আরো বলেন, পত্রিকায় সংবাদ আসলে যদি আমার কোন বড় কোন ক্ষতি করে ফেলে। আমি অসহায় ও গরীব মানুষ। তখন আমি কি করবো?

কালামের স্ত্রী ফাহিমা বেগম বলেন, প্রথমে ওদেরকে ভয় পেলেও এখন আর ভয় পাইনা। যা হবার হবে। তবু বলবো আমরা এই অত্যাচারের বিচার চাই। যাতে করে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটাতে পারে।

ছেলে কাইয়ুম বলেন, আমাদের মেরে এখন বাঁচার জন্য ওরা বলছে আমরা নাকি মাদক ব্যবসা করি। মাদক ব্যবসার কথা বলে আমাদের ফাসাতে চাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। যাতে করে আমাদের নতুন ভাবে কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।

এনএসআই এর মাদারীপুরের এডি সাইফুল ইসলাম বলেন, ও একজন ভারতের নাগরিক। ওর বাড়ি ভারতের চব্বিশপরগনা। বিষয়টি আমরা জানার পরে, ঐ চায়ের দোকানদার এসব নাটক সাজিয়েছে। ওকে কোন মারধর করা হয়নি।

মাদারীপুরের এনএসআই এর উপ-পরিচালক মো. মামুন এর ব্যবহৃত নম্বরের ফোন করা হলে, তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের আবাসিক চিকিৎসক ডা. অখিল চন্দ্রকে মোবাইলে ফোন দেয়া হলে, সে ফোন কেটে দেয়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার পাল বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে এসেছে বলে মন্তব্য করলেও পরে আর এ ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।

(এএসএ/এসসি/জানু২৪,২০১৫)