বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের সদ্য সংষ্কার হওয়া ভেড়ি বাঁধ আবারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বলেশ্বর নদীর প্রবল ঢেউ আর অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে ইতিমধ্যে বাঁধের বেশ কয়েকটি অংশ ধসে গেছে। ফাঁটল দেখা দিয়েছে আরো বিভিন্ন অংশে। তাফালবাড়ি লঞ্চঘাট সংলগ্ন স্লুইস গেট এলাকার বাঁধ সবচে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় তা ভেঙে গিয়ে ওই এলাকার আমনের বীজতলা, ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে বাধের এমন নাজুক অবস্থা দেখাগেছে।

উপজেলার তাফালবাড়ি লঞ্চঘাট এলাকার ভেড়ি বাঁধের ভাঙন দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বাঁধ ভেঙ্গে চাল রায়েন্দা গ্রামটি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশংকায় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বাধ সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেলে বলেশ্বর নদীর প্রবল স্রোতে বাধসংলগ্ন তাফালবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি, সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদ, তাফালবাড়ি বাজার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, পাকা সড়ক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এছাড়া বাধের আরো ৪-৫টি ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙে সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, তেরাবেকা, গাবতলা, চালিতাবুনিয়া, রায়েন্দা ইউনিয়নের ঝিলবুনিয়া, রাজেশ্বর, লাকুড়তলাসহ কমপক্ষে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বরের সুপার সাইক্লোন সিড়রের আঘাতে বলেশ্বর নদীর কোল ঘেষে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ভেড়ি বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে ওই বাঁধ সংস্কার ও ব্লক স্থাপনে বিশ্ব ব্যাংক ৩২ কোটি টাকা আর্থিক সহয়তা প্রদান করে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস এসএস/এসি জয়েন্টভেন্সার ওই বাঁধ সংস্কার কাজ ২ মাস আগে শেষ করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তা বিলিন হতে চলেছে।

ভেড়ি বাঁধ সংলগ্ন চাল রায়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা আজমল শরীফের স্ত্রী হামিদা বেগম, আ. জলিল হাওলাদার, তহিদুল শেখ, দেলোয়ার হোসেন, নজরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, ইউসুফ মৃধা, শইজুদ্দিন মোল্লা, বাদশা শরীফসহ অনেকে বলেন, ‘সিডরের পর বাঁধ মেরামতের কাজ দেইখ্যা অনেক খুশি অইছিলাম। কিন্তু কাজ শ্যাষ ওইতে না ওইতেই যেভাবে ভাঙ্গন শুরু ওইছে, হ্যাতে (তাতে) রাইতের ঘুম হারাম ওইয়া গ্যাছে। কোন সময় যানি বাঁধ ভাঙ্গগা মোগো সবকিছু সিডরের মতো ভাসাইয়া লইয়া যায়। মোগো তো আর কোনোহানে (কোথাও) যাওয়ার জায়গা নাই’।

তাফালবাড়ী এইচএম পলাশ মাহমুদ বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাঁধ সংস্কার কাজে ঠিকাদার ব্যাপক অনিমের আশ্রয় নেয়ার কারণে পুরো টাকা নদীর জ্বলে ভেঁসে যাচ্ছে। ভেড়িবাধ সংলগ্ন তাফালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থে ৩৫/১ পোল্ডারের ভেড়ি বাঁধ সংস্কার কাজে ঠিকাদার নয়-ছয় করার কারনে সাউথখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ১০/১৫ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যে বাঁধের ৮/১০টি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহুর্তে বাধ ভেঙ্গে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হতে পারে। তাই শিগগরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাঁধ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌলশী মো. মাঈনউদ্দিন সংস্কার কাজে অনিয়ম হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বাঁধ ভেঙ্গে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে সেব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

(একে/পিবি/জুলাই ০৪,২০১৫)