শোভন সাহা : বেদের মেয়ে জোসনা, দেশ আমার প্রেম আমার, রাঙ্গা ভাবী এমন সব সিনেমা হয়ত আর পাওয়া যাবেনা সেই সাথে হারিয়ে গিয়েছে দর্শকদের সিনেমা হলের প্রতি মনের ভালবাসার টান। বর্তমানে বাংলা সিনেমা তাদের অতীত ঐতিহ্যকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে ভবঘুরের মত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এফডিসি এখন একটি পঙ্গু প্রতিষ্ঠান। সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে অতি লোভে আমরা তাকে নিজ হাতে গলা টিপে মেরে ফেলেছি। সেই সাথে ধ্বংস করেছি আমরা আমাদের চলচিত্র শিল্পকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম করা শিল্পীদের হাতে এফডিসির ভার তুলে দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেখানেও আমরা কোন সুফল ভোগ করতে পারিনি।

তাছাড়া এখানে চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সমিতি। যার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে উন্নয়নের চেয়ে বেশি হয় ঠাণ্ডা মাথার দলাদলি। অথচ এফডিসিতে এক সময় বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষিদের একটা মিলন স্থল কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। ‍সমিতিগুলোর বিরুদ্ধে এমনিতেই অনেক অনিয়ম অভিযোগ আছে তাছাড়া সম্প্রতি আরো যোগ হয়েছে ভাড়া ও ইলেকট্রিক বিল পরিশোধ না করার কথা।

ক্যান্টিনের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এফডিসিতে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে চাইলেও বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার সম্মুখিন হতে হয়। আবার অনেক সময়ে একটি বিশেষ মহলের ছত্র ছায়ায় বেড়ে ওঠা কতিপয় মানুষের দ্বারা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এফডিসির মধ্যে পাঠাগার থাকবে সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষ বই পড়বে বা ছবির সিডি দেখবে কিন্তু সেই আবদুল জব্বার পাঠাগার আজ শুধু মানুষের মুখে মুখে আছে। আর শুটিং স্পটগুলোও পরিচর্চার অভাবে হারিয়ে ফেলেছে নিজের সৌন্দর্য।

আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা আইন যার অর্থ হল কাজীর গরু শুধু কাগজেই থাকে। রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন আর কোন কিছুই ঠিক থাকে না। গাজীপুরে এফডিসির একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ফিল্ম সিটি পরিণত হয়েছে গৃহপালিত পশু পাখি ও মাদকাসক্তদের আবাসস্থলে।

২০১৪ সালে এফডিসির গড়ে প্রতি মাসে আয় প্রায় ৬০লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে ৬ মাস ধরে এখানে গড়ে আয় হচ্ছে প্রায় ২৫-২৭ লাখ টাকা। কিন্তু এফডিসির কর্মচারীদের বেতনসহ আনুসাঙ্গিক সকল খরচের জন্য এফডিসির এফডিআর থেকে লোন করে মেটানো হচ্ছে সকল খরচ।

এফডিসির বিষয়ে চলচ্চিত্রকার সোহেল রানা বলেন ‘চলচ্চিত্র শিল্প বলে আর কিছু আমাদের দেশে নেই চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা কোমায় চলে গেছে। অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে এফডিসিকে পরিবর্তন করে ডিজিটাল করা হবে। তবে চলচ্চিত্রের এখন অনেক তরুণরা আগ্রহী। এটাই চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের পুঁজি’।

শুধু চলচ্চিত্রের অবস্থার কথা কেন সিনেমা হলের অবস্থা এখন অনেকটা শেষের দিকে। ২০০০ সালের দিকে চলচিত্রে একটি পরিবর্তন আসে। পশ্চাতের সিনেমাগুলোকে অনুকরণ করে আমাদের দেশে অনেক পরিচালক যখন বাংলা সিনেমায় নগ্নতাকে প্রাধান্য দেয় তখন দর্শকরা সিনেমা হলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। তাছাড়া চলচ্চিত্রের গল্পতেও নেই কোন নতুনত্ব। আর নায়দের চাহিদা বাড়ছে কিন্তু চলচিত্রের মান আর বাড়ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ভাল সিনেমা তৈরি হচ্ছে। তারপরও যেন দশকরা বরাবরই সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমন অবস্থায় সিনেমা হলের মালিকরা তাদের সিনেমা হল ভেঙ্গে তৈরি করছে মার্কেট। কারণ হিসাবে বলছে এই ব্যবসায় আর লাভ নেই, তাছাড়া শুধু শুধু অনিশ্চিত কোন ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আর কোন লাভ নেই।

আমাদের পাশের দেশ ভারতে হিন্দি সিনেমার বাজার বিশ্বব্যাপী। তাদের প্রতিটি সিনেমার বাজেট কমপক্ষে ৩০ কোটি ইন্ডিয়ান রুপি আর আমাদের দেশের সিনেমার বাজেট ৫০ লাখ টাকা আর গানসহ সকল বিভাগেই তারা আমাদের চেয়ে প্রায় একশত ভাগ এগিয়ে। দীঘদিন ধরে চলচ্চিত্রে চলছে অচলাবস্থা। এফডিসির অস্তিত্বও এখন সংকটের মুখে। হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের সিনেমার সুদিন।