ক্রীড়া প্রতিবেদক :প্রথম ম্যাচ ভালো যায়নি। ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলো টাইগাররা। টস হারলেও ঠিকই তারা বল হাতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর তাদের সেই ঘুরে দাঁড়ানো যেমন অবিশ্বাস্য, তেমন নাটকীয়। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হতে পারে এই কথা ভেবে যে কোথায় মেলে বাংলাদেশের এমন চ্যালেঞ্জ নেয়ার শক্তি! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে প্রথম ওয়ানডে হেরে। দেয়াল ভাংতে হবে, নইলে নক আউট করতে হবে প্রতিপক্ষকে।

দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিয়েছে টাইগাররা। পাল্টা আক্রমন। টাইগারদরে সেই আক্রমনে সামনে চলে আসে ২০০৭ সালের গায়ানা। ওই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৮৪ রানে অল আটু করে জয় তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন ১৬২ রানে অল আউট হয়েছে। বাকি থেকেছে ৪ ওভার। গায়ানাকে ঢাকায় এনে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজ বাঁচানোর আশা এখন টাইগাররা করতেই পারে।
নতুন বলে মুস্তাফিজুর রহমান এখন নিয়মিত ভালো বল করছেন। নিজের তৃতীয় ওভারে এদিন দলকে সাফল্য এনে দেন তিনি। ওপেনার কুইন্টন ডি কক হয়েছেন মুস্তাফিজের শিকার। ক্যাচ নিয়েছেন সাব্বির।
বাংলাদেশের সাথে হাশিম আমলার পারফরম্যান্স কখনোই ভালো নয়। এবারো তার ধারাবাহিকতা আছে। রুবেল দেখার মতো এক বলে আমলার অফ স্টাম্প কয়েক গজ দুরে নিয়ে ফেলেছেন। স্টাম্পের ডিগবাজি খাওয়ার দৃশ্যটা ছিল দারুণ।
১৬২ রানেই অল আউট দক্ষিণ আফ্রিকা

আমলা ২২ রান করে বিদায় নিলেন। প্রোটিয়াদের বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। কিন্তু বাংলাদেশী বোলারদের সামনে তাদের রানের চাকা ঘুরতে চায় না যেন। এবার বাজির ঘোড়া নাসিরকে বল দিলেন মাশরাফি। এবং প্রথম বলেই নাসির সাফল্য এনে দিলেন। ২৪ বলে ৪ রান করে আউট হয়েছেন রুসো। উইকেটে ধুঁকতে থাকা রুসোর নিজের জন্য আউটটা স্বস্তিরও হতে পারে! বল নষ্ট করছিলেন যে। এরপর ৭৪ রানের সময় চতুর্থ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিলার মিলার হিসেবে পরিচয় তার। কিন্তু মাহমুদ উল্লা এই ম্যাচে প্রথমবারের মতো বল হাতে পেয়েই ঝলসে উঠলেন। মিড উইকেটে অধিনায়ক মাশরাফি নিচু হয়ে যাওয়া চমৎকার এক ক্যাচ নিয়ে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ক্যাচ নেয়ার রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। মিলার করেছেন ৯ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার জুটির। আগের ম্যাচে যেটি করতে পারেনি টাইগাররা। এই ম্যাচে তারই অ্যাকশন রিপ্লে যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ে। জুটি মোটে হয় না। নিয়মিত বিরতিতে পরে উইকেট। ৪ উইকেট হারানোর পরও তখনো আসল বিপদটা তাদের সামনে এসে দাড়ায়নি। দেখায়নি ভয়াবহ চেহারাটা। আতঙ্ক জাগা শুরু ৯৩ থেকে ১০০ রানে পৌছাতে গিয়ে সেট হয়ে যাওয়া ডু প্লেসিস ও ও জা পল ডুমিনির উইকেট হারিয়ে ফেলার পর। ১০০ রানে ৬ উইকেট হারালে সেই দল কতোটাই বা পথ পাড়ি দিতে পারে!
উজ্জীবীত বাংলাদেশের খুব দরকার ছিলো ডু প্লেসিসের উইকেটটা। জমে গিয়েছিলেন। ভয় দেখাচ্ছিলেন বেশ। কিন্তা নাসির আবার যখন ফিরলেন তখন তাকে উড়িয়ে মারতে গেলেন প্লেসিস। ডিপে সৌম্য ভালোই নিয়েছেন ক্যাচটা। ডুমিনি আগের ম্যাচে ভালো না করলেও তাকে ভয় পাবার অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আনলাকি থার্টিনের শিকার তিনি! আর তিনি আনলাকি মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন অফ কাটারে। সাব্বির এমন ক্যাচ মিস করেন না। এই অবস্থায় রীতিমতো ধুকতে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রথম ওয়ানডেতে যারা পাত্তাই দেয়নি স্বাগতিকদের। রাবাদাকে আরেকটি কাটারে বিদায় করেছেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে ৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে সাত নম্বরে খেলা ফারহান বেহারডিন হাল না ধরলে আর টেলের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে কিছু রান না এলে আরো কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জায় পড়তে হতো আফ্রিকানদের। ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছেন ফারহান। নাসির ক্যারিয়ার সেরা ৩ উইকেট নিয়েছেন। রুবেল দুটি ও মাশরাফি আর মাহমুদ উল্লা পেয়েছেন একটি করে উইকেট।

১৬২ রানেই অল আউট দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রথম ওয়ানডেতে জুবায়েরের বোলিং মুগ্ধ করেনি। কিন্তু তার জায়গায় কাউকে নিলে তো বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেনি। তারা রুবেল হোসেনকে সুযোগ দিয়েছে। বাংলাদেশ তাই আজ তিন পেসার নিয়ে খেলেছে।
টস হারের পর মাঠে টেলিভিশনের কাছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, "আমাদের আট ব্যাটসম্যান আছে। যাদের দুজন বল করতে পারে। তাদের (প্রতিপক্ষ) আটকে দিয়ে ভালো ব্যাট করার ইচ্ছেই আমাদের।" প্রথম ম্যাচ জেতা একাদশটাকে অপরিবর্তিত রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের অধিনায়ক হাশিম আমলা বলেছেন, আগের ম্যাচের মতো তারা খেলতে পারলেই তা অনেক ভালো ব্যাপার হয়। কিন্তু আগের ম্যাচের মতো ব্যাটিংয়ে অন্তত কিছুই হলো না! মাশরাফি যা চেয়েছেন তার অর্ধেকটা তো পুরণ হয়েই গেলো!
(ওএস/এসসি/জুলাই১২,২০১৫)